parbattanews

বেতনের সিট পেয়েও নির্ধারিত সময় বেতন পাচ্ছেন না ১৩ শিক্ষক

বেতন না পেয়ে ১৩ শিক্ষকের পরিবার ছেলে-মেয়েসহ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে

প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ দেলওয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত বেতনের সিট শিক্ষকদের হাতে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের বেতন না পেয়ে ১৩ শিক্ষকের পরিবার ছেলে-মেয়েসহ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। সঠিক সময়ে ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ের ভর্তি করানোসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত তারা। সোনালী ব্যাংক থানচি শাখা ম্যানেজার নুরুল হক ও ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর আসরাফুল ইসলামের যোগসাজসে গত ছয় মাসের এককালীণ বেতন ভাতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বান্দরবানে থানচি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্পের -২ (রক্স) ১৩টি স্কুলের ১৩ জন শিক্ষক।

শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে জুন  এই ৬ মাসের জন্য প্রতিটি স্কুলের জন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভাতা, শিক্ষা উপকরণ, বাড়ি ভাড়া, জিপিএস-এর শিক্ষক পরিদর্শণ, স্কুল মেরামত, শিক্ষকদের মাসিক বেতনসহ প্রতিজনের প্রায় ৩৪ হাজার টাকা করে প্রায় ৫লক্ষ টাকা গত ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্প-২ (রক্স) প্রকল্পের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর আসরাফুল ইসলামের হাত থেকে ১৩জন শিক্ষক বেতন বিলের সিট গ্রহণ করেন।

সকল শিক্ষকদের বলা হয়েছিল আগামী ৮ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ১০ টায় সোনালী ব্যাংক থানচি শাখা থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করা যাবে । ১৩ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে থানচি সদর ও বলিপাড়ায় অবস্থানরত ৭জন শিক্ষক তাদের বেতন ভাতা উত্তোলনের জন্য সোনালী ব্যাংক থানচি শাখায়ে গেলে ব্যাংকের ম্যানেজার নুরুল হক তাদের সম্পূর্ণ বেতন ভাতা হতে ৭ হাজার করে পাবেন বাকি টাকা রেখে যেতে হবে প্রস্তাব দিলে তারা সবাই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ব্যাংক থেকে ফিরে চলে আসেন।

গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খোলা সময়ে ঘুরাঘুরি করলে ওই প্রস্তাবটি দিলে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের ব্যাংক ম্যানেজার নুরুল হক ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর (টিসি) ছাড়া উত্তোলন করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বলে জানান অভিযোগকারী শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা আরো জানান, তাদের অভিযোগ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে সরাসরি জানালে ও কোন প্রকার সমাধান পাওয়া যায়নি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্প-২ (রক্স) স্কুল পরিদর্শণ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ নানানভাবে দেখভাল করার জন্য একজন ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর (টিসি) নিয়োগ করেন । ২০১৮-১৯ সালের বান্দরবান জেলা আলিকদমে ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর (টিসি) চঃদঃ আসরাফুল ইসলামকে থানচি উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি শিক্ষা অফিসার নিজাম উদ্দিন বলেন, গত দুই বছরের আসরাফুল ইসলামকে থানচি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কোন কর্মকর্তা, শিক্ষকসহ তাকে কোনদিন দেখেনি চিনিওনা এবং থানচিতে আসেন নি। পূর্বে যারা ছিল তারা সবাই টিসি বেতনের সময় আমাদের অফিসারের স্বাক্ষর প্রয়োজন হতো। টিসির জন্য আমাদের অফিসের কাজের জন্য টেবিল চেয়ার সংরক্ষন করা রয়েছে ।

সোনালী ব্যাংক থানচি শাখা কয়েকজন গ্রাহক নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এই প্রতিবেদককে বলেন, রক্স স্কুলের ৭জন শিক্ষক ব্যাংকে ঘেরাঘুরি করছে দেখে আমরা চুপচাপ ছিলাম। আমাদের উপস্থিতিতে তাদেরকে ৭ হাজার পাবেন বাকি রেখে দিতে হবে এ কথা ম্যানেজার সাহেব বলেছিল। তা আমরা শুনেছি তবে বাকিটা আর জানা নেই ।

রক্স স্কুলের শিক্ষক মংসাচিং মারমা, নুসিংমং মারমা, পর্দ্দা পতি ত্রিপুরা, জনপতি ত্রিপুরা, মাচিংপ্রু মারমা, লাজু ম্রো, নাইয়ু খুমী, কাইমু খুমী সকলের রক্স স্কুলের শিক্ষক এই প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের বিলের (টিসি) স্যারের সাক্ষর ছিলনা সাক্ষরের জন্য তার মুঠো ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করার কারণে ব্যাংক খোলার দিন প্রতিদিন একবার করে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারের সরনাপন্ন হই। ম্যানেজার আমাদের বারবার বলেন ৭ হাজার টাকা নিলে (টিসি) স্বাক্ষর ব্যাংকের স্বাক্ষর সব মিলবে কিন্তু আমার প্রস্তাবের রাজি না হলে টাকাগুলি ৩০ ডিসেম্বর ব্যাংক ক্লোজিং এর ফেরত দেয়া হবে। আমাদের বেতন না পাওয়ার কারণে ছেলে মেয়েদের স্কুলের ভর্তি কোতে পারছিনা এবং ঐ বেতনের উপর নির্ভর ছিল পরিবারের সকলের।

যোগাযোগ করা হলে সোনালী ব্যাংক আলিকদম শাখা ও সাবেক থানচি শাখা ম্যানেজার গিয়াজ উদ্দিন বলেন, রক্স স্কুলের জন্য সোনালী ব্যাংকের দুইটি একাউন্ট রয়েছে একটি যৌথ অপরটি একক স্বাক্ষরের মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, ঘর ভাড়া, ড্রেস ইত্যাদি প্রদান করে আসছে। বর্তমান দায়িত্বরত ম্যানেজার শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব এই প্রথম সিলেট বাড়ি হওয়ায় চট্টগ্রামে আঞ্চলিক ভাষা কম বুঝেন। সুতরাং থানচি উপজেলা প্রায় বেশীরভাগ গ্রাহক চট্টগ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় পারদর্শী।

এই প্রতিবেদক বৃহস্পতিবার বিকালে সরাসরি যোগাযোগ করলে সোনালী ব্যাংক থানচি শাখা ব্যবস্থাপক নুরুল হক বলেন, আমি নিজ উদ্যোগে শিক্ষকদের বলেছিলাম আপনাদের জন্য আমাদের ব্যাংকে দুইটি একাউন্ট এর প্রায় ১০ লক্ষ টাকা পড়ে আছে। শিক্ষকরাও নির্ধারিত সময়ে  উত্তোলনের জন্য এসেছিলেন কিন্তু টিসি স্বাক্ষর না থাকায় দেয়ার সম্ভব হয়নি।

শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজার নুরুল হক বলেন, আমি যদি বলে থাকি তাহলে শিক্ষকরা নিলনা কেন? তারা নিলে ঘটনা সত্য হতো । ম্যানেজার অস্বীকার করে বলেন, অন্যথায় টাকা গুলি ৯৮% ফেরত যাওয়ার মুহুর্তে রয়েছে। আমি সংশ্লিষ্টদের মাসিক প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি।

টিসি আসরাফুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন দিলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ম্যানেজার নুরুল হক ৫বার ফোন করার পর (টিসি) আসরাফুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি এখন ঢাকা হেড অফিসের কাজের ব্যস্ত আছি। কয়েকদিন পর আলিকদমে আসলে আমি আপনাকে ফোন দেব তখন বিস্তারিত কথা হবে।

সুযোগের ফাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষকরা গত ডিসেম্বর মাসের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হয়নি তাই তাদের বেতন ভাতা পাবে না বলে ফোন কেটে দেন।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান চসাথোয়াই মারমা বলেন, আমি টিসিকে অনেকবার ফোন করেছি কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা বলেন, কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ নিয়ে আসছিল (টিসি) ফোন রিসিভ না করায় সমস্যা সমাধান করার সম্ভব হয়নি।

Exit mobile version