parbattanews

বেপোরোয়া রোহিঙ্গারা: জোরদার হচ্ছে প্রত্যাবাসন দাবি

মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দু’বছরের মধ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এরা স্থানীয়দের জন্য বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। নির্যাতিত এ সব রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিলেও তারা এখন বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে জোরদার হচ্ছে রোহিঙ্গা দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবি।

রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণ আইন-শৃঙ্খলা স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির সম্মুখীন। রোহিঙ্গা আশ্রিত উখিয়া- টেকনাফের সাড়ে ছয় লক্ষ জনসাধারণ আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কাছে যেন এখন সংখ্যালঘু।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা জাতিসংঘের হিসেব মতে ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ জন বলা হলেও বাস্তবে এর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। গত দু’বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নিয়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিশু।

এ ছাড়াও রেজিস্টার্ড আনরেজিস্টার্ড ক্যাম্পের বাইরে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা, দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং বান্দরবানের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে শত শত শত রোহিঙ্গা। এ সব রোহিঙ্গা এখন স্থানীয়দের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে বিষিয়ে উঠেছে স্থানীয় জনসাধারণের জীবনযাত্রা।

উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার ৮ হাজার ৫ শত হেক্টর বনভূমি বরাদ্দ দিলেও বাস্তবে রোহিঙ্গারা দখল করে আছে তার দ্বিগুণ বেশি বনভূমি। রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির সঠিক কোন পরিমাণ জানা না গেলেও সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেন এর এক বিবৃতি থেকে জানা গেছে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত ৭২ হাজার কোটি (প্রায় এক শত বিলিয়ন) টাকা ব্যয় করেছে।

এছাড়াও বিশাল বনভূমি উজাড় করার কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে স্থানীয় অধিবাসীরা।
এদিকে রোহিঙ্গাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। মাদক ব্যবসা, খুন, অপহরণ, গুম, ধর্ষণসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা রোহিঙ্গারা করে যাচ্ছেনা।

গত দুই বছরে বিজিবি-পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৩২ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ৪৭১ টি মামলা হয়েয়ে। এর মধ্যে হত্যা মামলা আছে ৪৩ টি। এসব মামলায় সহস্রাধিক রোহিঙ্গার নাম রয়েছে।

গত ২৫ আগষ্ট রাতেও উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রহিমুল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা যুবককে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী হত্যা করেছে। রোহিঙ্গারা এতই বেপরোয়া উঠেছে যে, যেসব স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের আশ্রয় দিয়েছে, মুখে খাবার তুলে দিয়েছে তাদের উপর তারা আক্রমণ করা শুরু করেছে।

গত ২২ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাতে রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার সেলিমের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারি সন্ত্রাসী টেকনাফের জাদিমুরার স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুককে নিজ বাড়ীর সামনে থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এমনকি ওমর ফারুকের এক ভাইকেও তারা পরে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ তাকে উদ্ধার  করেছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, গত দুই বছরে রোহিঙ্গারা মারাত্মকভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা অনেক অপরাধ কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ৯টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং এতে এক হাজার এক শত পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

রোহিঙ্গাদের এই বেপরোয়া ভাব এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনসাধারণ। দুই দফায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভন্ডুল হওয়ায় আরো বেশী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করলে কল্যাণ হবে।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। মানবিক কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোহিঙ্গা বোঝা বেশীদিন বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়াই এর একমাত্র সমাধান বলে তিনি মনে করেন। যতদিন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ না হয় ততদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখারও দাবি জানান তিনি।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুরউদ্দিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে ওই এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতি স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যেন অপরাধ করেছে! তারা স্থানীয় জনগণ এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপরও আক্রমণ করেছে বহুবার। এসব রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়া না হলে গোটা কক্সবাজার ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গাদের পেছনে ইন্ধনদাতা এনজিওদের প্রতিরোধ করার দাবিতে ৩১ আগষ্ট সমাবেশ ডেকেছে উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ষড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় আনা ও দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কর্মকান্ড শুরু করার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা।

এনজিওদের ষড়যন্ত্রে রোহিঙ্গাদের দাপটে উখিয়া-টেকনাফের সাড়ে ছয় লক্ষ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষে ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ। এ লক্ষ্যে ৩১ আগষ্ট বিকাল ৩টায় উখিয়া ষ্টেশন চত্বরে গণজমায়েতে শরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ নেতা সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ শিকদার ও গফুর মিয়া চৌধুরী বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের মানবিকতা দেখিয়ে আশ্রয় দিয়েছিল। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের মারাত্মক ক্ষতি হলেও মানবিক কারণে এতদিন আমরা মুখ বুঁজে ছিলাম। রোহিঙ্গারা এখন মাথায় উঠছে। তাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে দিতে হবে।

Exit mobile version