parbattanews

বৈরি আবহাওয়ার কবলে সেন্টমার্টিনগামী ৯টি জাহাজ, নিরাপদে ফিরেছে পর্যটকেরা

১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাল্গুনের প্রথম দিন। চমৎকার আবহাওয়া। সারাদিন শান্ত সাগর। ঠিকঠাক মতো সব চলেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কোন সংকেত ছিল না। সকালে যথারীতি টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন গিয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ। কিন্তু বিকালে সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে হঠাৎ বৈরি আবহাওয়া। বেড়ে যায় বাতাসের গতি। যার কবলে পড়ে টেকনাফগামী পর্যটকবাহী ৯টি জাহাজ। তবে কোন ধরনের দুর্ঘটনাটা ছাড়া জাহাজগুলো টেকনাফ দমদমিয়া ঘাটে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

এদিকে, সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে পর্যটকবাহী জাহাজ বাতাসের কারণে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে হেলেদুলে নৌপথ পাড়ি দেয়ার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজ এসটি সুকান্ত বাবু সাগরের উত্তাল ঢেউতে টেকনাফের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। অন্য একটি ভিডিওতে একই দৃশ্য দেখা যায় পারিজাত নামের একটি জাহাজের।

পর্যটকরা জানান, সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে প্রায় সব জাহাজই কমবেশি সাগরে দুলেছিল।

কয়েকজন পর্যটক জানান, সকালে সেন্টমার্টিন রওনা দেয়ার সময় বাতাস না থাকায় নাফনদ ও বঙ্গোপসাগর শান্ত ছিল। কিন্তু বিকেলে জাহাজগুলো সেন্টমার্টিন ছেড়ে কিছুপথ আসতে বাতাস শুরু হয়। এতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের বঙ্গোপসাগর অংশে উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ে। তখন জাহাজগুলো সাগর অংশে বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় এদিক-সেদিক দুলে নাফনদে ঢুকে কিছুটা স্বস্তি পায় এবং আশঙ্কামুক্ত হয়।

সেন্টমার্টিন থেকে ফেরা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান জানান, ব্যক্তিগত কাজ থাকায় এবং অনেকটা ঘুরতে গত সোমবার সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়েছিলেন। রওনা দেয়ার কিছুসময় পর সাগরে বাতাসের কবলে পড়ে জাহাজগুলো। সবগুলো জাহাজ ঢেউয়ের ধাক্কায় কমবেশি দুলছিল। এসময় পর্যটকদের অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়। তবে জাহাজগুলো নাফনদে ঢুকে কিছুসময়ের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে। সন্ধ্যায় আমরা নির্ধারিত সময়ে টেকনাফের জাহাজ ঘাটে পৌঁছায়।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মাহবুব নামের এক পর্যটক জানান, আনন্দের সাথে মঙ্গলবার সকালে তারা সেন্টমার্টিন গিয়েছে। বিকেলে ফেরার পথে বাতাসের কারণে তাদের বহনকারী জাহাজ এদিক-সেদিক দুলেছে। ভাগ্য সহায় ছিল, বিপদ কাটিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হই।

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচলকারী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সী ক্রুজ অপারেটর এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (স্কোয়াব) এর সভাপতি তোফায়েল আহমেদ জানান, শান্ত আবহাওয়ার মধ্যে পর্যটকবাহী ৯টি জাহাজ সকালে সেন্টমার্টিন গিয়েছে। কিন্তু বিকেলে ফেরার পথে সামান্য প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হয় সব জাহাজ। আল্লাহর রহমতে কোন দুর্ঘটনা ছাড়া সবাই নিরাপদে ফিরেছে। তিনি জানান, প্রকৃতির উপর কারো হাত নাই। এমন ঘটনা কারো প্রত্যাশিত নয়। পর্যটকদের সেবা ও সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে তারা সর্বদা আন্তরিক বলে জানান তোফায়েল আহমেদ।

কক্সবাজারের ৫ লক্ষাধিক মানুষ পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেক্টরে জড়িত। যাদের জীবন-জীবিকা হয় এই পথ থেকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে পর্যটনখাতের ক্ষতি হয় এমন নেতিবাচক প্রচারণা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি সিন্দবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন এর টেকনাফের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যবস্থাপক শাহ আলম জানান, সাগরে বাতাসে উত্তাল ঢেউয়ের সৃষ্টি হলে সবকটি নৌযান কমবেশি দুলে এটি স্বাভাবিক। তবে বড় ঢেউতে কোন কোন নৌযান কম হেলায় দুলে, কোনটি আবার বেশি।’

টেকনাফের স্থানীয় প্রবীণ জেলে আব্দু সালাম জানান, নাফনদ ও বঙ্গোপসাগরের মিলনমোহনা যেটি স্থানীয় ভাষায় ‘গরা’ বলে সেখানে স্বাভাবিক সময়েও ঢেউ উত্তাল থাকে। বাতাস হলে ‘গরা’ আরো বেশি উত্তাল হয়ে যায়। তখন এই ‘গরা’ পাড়ি দেয়া সব ধরনের নৌযানের জন্য কঠিন হয়ে যায়। ‘গরা’ পার হলে তেমন একটা ঝুঁকি থাকেনা।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাসের কারণে সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে পর্যটকবাহী জাহজগুলো কিছুটা দুলছিল। তবে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সব জাহাজ নিরাপদে গন্তব্যে ফিরেছে। সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করতে প্রশাসনের একটি টিম মাঠে থাকবে বলেও জানান ইউএনও ।

Exit mobile version