parbattanews

বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে খাগড়াছড়ি

SONY DSC

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব “বৈসাবি”-কে  ঘিরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখন সাজ-সাজ রব। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরের বরণকে সামনে রেখে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। হাট-বাজারগুলোতে পড়েছে কেনা-কাটার ধুম। এদিকে বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির হোটেল-মোটেল আগাম বুকিং হয়ে গেছে। বৈসাবি উৎসবে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বার্তায় সুখ, সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিটি জনপদ এখন উৎসবের জোয়ারে ভাসছে। বৈসাবি উপলক্ষে আগামী মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের উদ্যোগে বের হবে বর্ণাঢ্য র‌্যালি। আর তার পরের দিন বুধবার বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বৈসাবি উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে শহর থেকে প্রতিটি জনপদে উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়েছে।

আগামী ১২ এপ্রিল নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে মূল উৎসব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১ এপ্রিল থেকে গ্রামে-গ্রামে চলছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহবাহী নানা খেলা-ধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সে সাথে চলছে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি।

বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি জেলার হাট-বাজারে কেনা-কাটা বেড়েছে। বিপনী বিতানগুলোতে এখন পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙ্গালী তরুণীদেরও উপচে পড়া ভীর। খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো থাকায় খাগড়াছড়িতে এবার উৎসব মখুর পরিবেশে বৈসাবি পালিত হবে।

এদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্ট্রিটিউট’র উদ্যোগে তিন দিন ব্যাপী বৈসাবি’র মেলার আয়োজন করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমান, ডিজিএফআই অধিনায়ক কর্ণেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, সদর জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল জিএম সোহাগ পিএসসি, জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সদস্য মংশেপ্রু চৌধুরী অপু, জুয়েল চাকমা, খগেশ্বর ত্রিপুরা ও নিগার সুলতানা।

খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট উপ-পরিচালক সুসময় চাকমা জানান, মেলা চলাকালীন প্রতিদিন সন্ধায় ইন্সটিটিউট’র নিজস্ব শিল্পীগোষ্ঠীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে বলেও জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।

এদিকে খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে ২০ দিন ব্যাপী পার্বত্য উদ্যোক্তা ও সাংস্কৃতি মেলা।

খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বৈসাবি উপলক্ষে জেলাবাসীর সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে বলেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো থাকায় খাগড়াছড়িতে এবার উৎসব মখুর পরিবেশে বৈসাবি পালিত হবে। এ উৎসবকে সামনে রেখে এ অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙালি ভ্রাতৃত্বে বন্ধন আরো সু-দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আবহমান কাল ধরে লালিত ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু, মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই আর চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু এবং বাঙালিদের চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণ উৎসব পালিন করে আসছে। এ উৎসব-আনন্দ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙালি জনগোষ্ঠীও উপভোগ করে থাকনে। তিনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসবে এ অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন আরো সু-দুঢ় হবে বলে প্রত্যাশা করেন।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদেরে উদ্যোগে ১১ এপ্রিল সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালির মধ্য দিয়ে পুরাতন বছর বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হবে। র‌্যালি শেষে খাগড়াছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী খেলা, নৃত্য, পানি উৎসব ও সন্ধ্যায় রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

খাগড়াছড়ি সার্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহবায়ক রণিক ত্রিপুরা জানান, বৈসাবি উৎসবকে আনন্দ-উল্লাসে উদযাপনে বর্ণাঢ্য কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৫-৬ ফুল ভাসানো ও মধুপুর থেকে মঙ্গল শোভা যাত্রা বের হয়ে উপজেলা পরিষদ মাঠে শেষ হবে।

এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে পুরাতন বর্ষ বিদায় ও নতুন বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা মুল ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের লক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় কর্মসূচী রয়েছে।

খাগড়াছড়ি হোটেল অরন্য বিলাসে মালিক স্বপন দেবনাথ জানান, বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে তার আবাসিক হোটেলে সব ক’টি রুম ১১ এপ্রিল থেকে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত আগাম বুকিং হয়ে গেছে।

১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।

ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে তঞ্চঙ্গ্যা,বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ম্রো, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্রময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসব পালন করে থাকে।

বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরো সু-দৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।

Exit mobile version