parbattanews

বৈসাবি শোভাযাত্রায় বাঁধাদান প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি প্রশাসনের বক্তব্যের প্রতিবাদ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

‘বৈসাবী উৎসবকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা করেছে’ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন তথ্যের ভিত্তিতে খাগড়াছড়িতে গত ১২ এপ্রিল বৈসাবী উপদযাপন কমিটির ব্যানারে র‌্যালির নামে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী এলটন চাকমা (২৫) নামে এক ইউপিডিএফ কর্মীকে আটক করে।

প্রশাসনের এমন আশঙ্কারভিত্তিতে সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি কর্তৃক আয়োজিত বৈসাবি শোভাযাত্রায় বাঁধাদান এবং এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি প্রশাসনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ’।

শনিবার খাগড়াছড়ির ‘২৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি’র স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের প্রধান ও ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসাবি উপলক্ষ্যে আয়োজিত উক্ত শোভাযাত্রায় হামলাকে আমরা আমাদের ঐহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐক্য-সংহতির উপর উদ্দেশ্যমূলক ন্যাক্কারজনক হামলা বলে মনে করি।’

বিবৃতিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ বলেন, ‘হামলার যৌক্তিকতা তুলে ধরার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমত: খাগড়াছড়ি শহরের মধুপুর বাজারে শোভাযাত্রা আরম্ভের প্রাক্কালে সংঘটিত হামলার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু জেলা পরিষদ আগের দিন বৈসাবি র‌্যালির আয়োজন করেছে, তাই আর একটি বৈসাবি র‌্যালি বের করতে দেয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হলো, বৈসাবি উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের বহু আগে জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করে বৈসাবি শোভাযাত্রা ও অন্যান্য কর্মসূচী বিষয়ে তাকে অবগত করা হয়েছিল এবং তিনিও এতে যথারীতি মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছিলেন। আর জেলা পরিষদ বৈসাবি র‌্যালি করেছে বলেই আর অন্য কেউ বৈসাবি র‌্যালির আয়োজন করতে পারবে না — এ রকম নির্বোধ যুক্তি আমরা কোন কালে শুনিনি। তাছাড়া এ যদি প্রশাসনের সত্যিকার অভিপ্রায় হতো, তাহলে আমাদের ১২ তারিখের বৈসাবি র‌্যালির পর আরো অনেকে র‌্যালি বের করলে তাতে বাধা দেয়া হয়নি কেন? আরও প্রশ্ন, যদি জেলা পরিষদের বৈসাবি র‌্যালি ছাড়া অন্য কোন বৈসাবি র‌্যালি বের করা যাবে না বলে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত থেকে থাকে, তাহলে তা আগে ভাগে আমাদের জানিয়ে দেয়া হলো না কেন?’

তারা আরো বলেন, ‘হামলার প্রাক্কালে উপস্থিত সেনা-পুলিশের দ্বিতীয় অজুহাত হলো, শোভাযাত্রায় মামলাভুক্ত আসামী রয়েছে, তাই শোভাযাত্রা বের করা যাবে না। এ প্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য হলো, বৈসাবি র‌্যালি সর্বজনীন, — যে কেউ এতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। যদি কোন মামলাভুক্ত আসামী র‌্যালিতে অংশ নিয়ে থাকে, তাহলে তার দায়-দায়িত্ব আয়োজকদের নয় এবং তার অংশগ্রহণের কারণে পুরো র‌্যালি পণ্ড করে দেয়া কোন বিচারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কোন আয়োজকের পক্ষে জানা সম্ভব নয় অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার নারী পুরুষের মধ্যে কে মামলাভুক্ত আসামী, আর কে মামলাভুক্ত আসামী নয়। বরং পুলিশের দায়িত্ব হলো সেই আসামীকে গ্রেফতার করে অনুষ্ঠান চলতে দেয়া। অথচ সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সেটা না করে মামলাভুক্ত আসামী গ্রেফতারের অজুহাতে বহু টাকা খরচ করে বহু পরিশ্রমে আয়োজিত পুরো বৈসাবি র‌্যালি ভণ্ডুল করে দিয়েছে।’

‘অপরদিকে র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারীদেরকে বহনকারী গাড়িগুলোকে বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়ার কারণ হিসেবে পুলিশ প্রশাসন বলেছে অংশগ্রহণকারীরা ‘লক্কর ঝক্কর’ গাড়িতে করে আসছিলেন। তাদের এই ছেলেমানুষী ঠুনকো অজুহাত কোনভাবে ধোপে টেকে না। প্রথমত, র‌্যালির জন্য ব্যবহৃত গাড়িগুলোর অবশ্যই ফিটনেস ছিল। কারণ র‌্যালির দিন বাদে অন্য সময় ঐ গাড়িগুলো প্রতিদিন রাস্তায় চলাচল করে থাকে। তাই আমাদের প্রশ্ন, কেন পুলিশের কাছে ঐ গাড়িগুলোর ফিটনেস সকল সময় থাকলেও কেবলমাত্র সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আয়োজিত র‌্যালির দিনে থাকে না? দ্বিতীয়ত, যদি গাড়িগুলোর ফিটনেস না থাকার জন্য বাধা দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে কেন ঐদিন একটি গাড়ির বিরুদ্ধেও মামলা করা হলো না?’

বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকারের একটি মহল চায় না পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ সকল পাহাড়ি জাতিগুলো বৈসাবির (বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু) চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হোক। তারা পাহাড়িদের ভাগ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে চিরকাল শাসন শোষণ জারী রাখতে চায়। এ কারণে তারা বৈসাবির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসবের র‌্যালিতে হামলা চালিয়েছে।
তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এভাবে ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে কিংবা কোন ধরনের ষড়যন্ত্র করে বৈসাবির চেতনাকে ধ্বংস করা যাবে না, আবহমান কাল ধরে এ অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি জাতিগুলোর নিবিড় বন্ধনের শেকড়কে উপড়ে ফেলা যাবে না এবং তাদের শত শত বছরের ঐক্য-সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে বিনষ্ট করা যাবে না।’

বিবৃতিতে তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং এ হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও আটককৃত খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের ছাত্র এলটন চাকমার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা, জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, নুনছড়ি মৌজার হেডম্যান ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, অপসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রার্থনা কুমার ত্রিপুরা, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ও সমাজকর্মী বিনোদ বিহারী খীসা, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক মধু মঙ্গল চাকমা, সমাজকর্মী জীবলাল চাকমা, সমাজকর্মী পুরুষোত্তম চাকমা, সমাজসেবক সুকৃতি জীবন চাকমা, নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী নমিতা চাকমা, স্বনির্ভর বাজার চৌধুরী যশোবন্ত দেওয়ান, খাগড়াছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রণিক ত্রিপুরা, ভাইবোন ছড়া ইউপি চেয়ারম্যান কান্তি লাল চাকমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী সরোজ কুমার চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যালয় পরিদর্শক অর্ধেন্দু শেখর চাকমা, দশবল বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জ্ঞান বিকাশ চাকমা, আইনজীবী সমারি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, পৌর সমাজ উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপায়ন চাকমা, হুয়াঙ বোইও বা’র সভাপতি ও সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির সদস্য অনুপম চাকমা এবং ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির সদস্য ধীমান খীসা।

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ-পুলিশ সংঘর্ষ : এএসপি আহত, ইউপিডিএফ কর্মী আটক

 

প্রশাসনের সতর্কতায় খাগড়াছড়িতে বৈসাবী উপলক্ষ্যে বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা ভণ্ডুল

Exit mobile version