বোরো’য় সেজেছে পানছড়ির মাঠ

boro pansariশাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:

এইতো কিছুদিন আগে আমনের অট্ট্রালিকা ধানের স্তুপ দেখে ক্ষণিকেই মন-প্রাণ সব জুড়েছিল। আর কৃষাণ-কৃষাণী হেসেছিল স্বস্তির হাসি। কারণ গোলা ভরেছিল ধানে। তাই নবান্ন উৎসবে নতুন ধানের চালের মজার মজার পিঠা পায়েসের মজাটা আজো যেন জ্বিবে জল এনে দেয়। গোলা ভরা ধান আর পিঠা পায়েসের জন্য খ্যাত এই পানছড়ি উপজেলা। বাঙালী, চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ সকল সম্প্রদায়ের লোকই বাস করে এই এলাকায়। কৃষিপ্রধান এই উপজেলার বেশীর ভাগ লোকের পেশা হলো কৃষি। তাইতো সারা বছর সাত সকালে কাস্তে হাতে জমিনে নেমে পড়ে কৃষাণ-কৃষাণী। তাদের কাস্তের আছড় আর আপদমস্তক ঘাম ঝরিয়েই পড়ন্ত বিকেলে ছুটে চলে নিজ গন্তব্যে। গত বছর এই উপজেলায় আমনের চাষ হয়েছিল ৩৬.১০ হেক্টর জমিতে। পানছড়ি কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়া অনুুকূলে থাকার ফলে রেকর্ড করা ফলন হয়েছে এখানে।

বর্তমানে আমনের মৌসুম শেষ করে কৃষাণ-কৃষাণী ব্যস্ত বোরো নিয়ে। এরি মাঝে বোরো’র সবুজ ধানের কচি কচি ডগা উঁকি দিচ্ছে মাঠের পর মাঠ। ফাগুনের মৃদু মৃদু বাতাসে জমিনে বোরো ধানের সবুজ সবুজ কচি ডগার ঢেউ খেলানোর দৃশ্য মন মাতিয়ে তোলে। এদিকে আগাছা নিধন, উইডার আর সার ছিটানোর কাজে ব্যস্ত থাকায় কথা বলার সময় পর্যন্ত নেই কৃষাণ-কৃষাণীর। বাড়ি থেকে ছেলে বৌয়ের রান্না করা ভাত থালায় নিয়ে গামছা পেচিয়ে নিয়ে আসে রাম, সাম, যদু, মধুরা। আর আইলের পাশে বসেই কাঁদা মাখানো শরীরে হাত ধুয়ে লঙ্কা আর পিয়াজ দিয়ে কেউ কেউ সেরে নিচ্ছে দুপুরের খাওয়ার পর্ব। যা গ্রাম-বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যকে শিল্পীর তুলির নিপুন আছড়ের মত ফুটিয়ে তোলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো পানছড়ি জুড়েই সবুজের এক লীলাভূমি। মাঠের পর মাঠ সেজেছে বোরো’তে। অনুকূল আবহাওয়া পেলেই শতভাগ হাসি ফুটবে। এবারে বোরো’র শুরুটা কৃষকদের জন্য বেশ সুফল বয়ে এনেছে শান্তিপুর রাবার ড্যামটি। ড্যামের বাঁধের ফলে চেংগী এখন পানিতে ভরপুর। দু’ধারে মেশিন বসিয়ে সহজেই পানি তুলে নিচ্ছে কৃষক মহল। জমিনে পরিমাণমত পানি দিতে পারায় ধানের গোছার সাইজও বেশ বড় বড় দেখা গেছে। তবে রাবার ড্যামের বাঁধের সামনের জমিগুলো আবার কিছুটা দুর্বল পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে বাঁধের কুফল ভোগ করছে ঐ এলাকার কৃষককূল। তারা পরিমাণমত পানি দিতে পারছেনা। তবে সহসাই বৃষ্টি হবে এ আশায় কৃষকেরা হতাশ হয় নি।

পানছড়ি চেংগী নদী রাবার ড্যাম সমবায় সমিতি লি: এর সভাপতি সুধাংশু বিকাশ চাকমা জানান, সমিতির আওতাভুক্ত ৫০০ হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষ হয়েছে। ১৭টি মোটরের সাহায্য জমিতে পানি দেয়া হচ্ছে বলেও জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানালেন কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামটি পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে কর আদায়ের ক্ষেত্রে সবাই কৃপণতা করছে।

এবারের বোরো সম্পর্কে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মানিক মিয়া ও নির্বান কুমার চাকমা কৃষকদের প্রশংসা করে বলেন, কৃষকরা চারা রোপনের সময় আইল ঠিক রেখেছিল যার ফলে আগাছা নিধন ও উইডার ঠিকভাবে দেওয়ায় ধানের চারা বেশ হৃষ্টপুষ্ট। অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ পেলে বাম্পার ফলনের  সম্ভবনা রয়েছে। তারা জানান, গতবারে চাষ হয়েছিল ১৭১০ হেক্টর জমিতে যার লক্ষ্যমাত্রাও ছিল ১৭১০। ফলন হয়েছিল হেক্টর প্রতি ৬.৪টন। বর্তমানে চাষ হয়েছে ১৬৯০ হেক্টর জমিতে যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬৮৬ হেক্টর। অত্র এলাকার উৎপাদিত ফসল নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হচ্ছে বলেও তারা জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন