parbattanews

বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা মামলায় ৩ বার্মিজ আটক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এসপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলেন পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী

AT-15

স্টাফ রিপোর্টার:

বান্দরবানের বাইশারীতে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য অস্বীকার করেছে ভিক্ষুর পরিবার ও স্বজনেরা। শুধু তাই নয় তাদের বক্তব্যে এলাকাবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ধরনের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

এদিকে ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পুলিশ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন শনিবার রাতে ৩ জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা ও একজন চাক সম্প্রদায়ের বাসিন্দা। তবে তাদের সকলের বাড়িই মিয়ানমার বলে জানা গেছে। আটককৃতরা বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে রয়েছে।



 

পার্বত্যনিউজের বাইশারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার পেছনে আত্মীয় স্বজন থাকতে পারে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের যে কথা বলেছেন তা ভিক্ষুর পরিবারের সদস্যরা অস্বীকার করেছেন। ভিক্ষুর ছেলে অংছা থোয়াই চাক পার্বত্যনিউজকে জানিয়েছেন, এলাকায় তার বাবার কোনো শত্রু ছিলো না। তাদের সাথে তাদের পরিবারের ও স্বজনদের কারো সাথে কোনো বিরোধ ছিলো না। অন্যদিকে জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গতকাল স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে জমিজমা সংক্রান্ত কারণ থাকতে পারে বলে যে মন্তব্য করেছেন তাও অস্বীকার করেছে তার পরিবার।ভিক্ষুর ছেলে অংছা থোয়াই চাক পার্বত্যনিউজকে এ ব্যাপারে জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে তার বাবা একটি বাগানসহ জমি চার লাখ টাকায় স্থানীয় নজির হোসেন নামে এক ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করেছেন। জমি ক্রেতা ইতোমধ্যে জমির সকল টাকা পরিশোধ করেছেন এবং জমিটি এফিডেভিট দলিল করে তারাও ক্রেতাকে হস্তান্তর করেছেন। কাজেই এ নিয়ে আর বিরোধের কোনো কারণ থাকতে পারে না।

জানা গেছে, মংশৈউ চাক শুরু থেকে ভিক্ষু ছিলেন না। দুই বছর আগে তিনি সংসার ধর্ম ত্যাগ করে উপর চাক পাড়ায় নিজ জমিতে একটি ভাবনা কেন্দ্র নির্মাণ করে ধর্মীয় জীবনযাপন শুরু করেন।

এলাকাবাসীদের বক্তব্য, মংশৈউ চাক ভিক্ষু এলাকায় অত্যন্ত স্বজ্জন ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলো। তার কোনো শত্রু ছিলো না।কারো সাথে তার বিরোধও ছিলো না। পরিবারের কেউ বা জমিজমা সংক্রান্ত কারণে তিনি খুন হতে পারেন এমন কথা কেউ বিশ্বাস করছে না।

এদিকে মংশৈউ চাক ভিক্ষু হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। এরা তিনজনই মিয়ানমারের নাগরিক। এদের মধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা। তাদের নাম জিয়াউদ্দীন(২৮) ও আবদুর রহিম(২৯) । তাদের বাড়ি মিয়ানমারের মংডুতে। আটক অপরজনের নাম ক্লামং চাক(৩২)। তিনি বেশ কয়েক বছর আগে মিয়ানমার থেকে এসে নাইক্ষ্যংছড়িতে বসবাস শুরু করেছেন।

আটককৃতদের আত্বীয়-স্বজন বলেন, তারা নির্দোষ, এলাকায় দিন মজুরী করে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য থোয়াইচাহ্লা চাক বলেন, উক্ত ঘটনায় এলাকার লোকজন আতংকিত অবস্থায় রয়েছে। তবে বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাথে তার জানামতে কারো বিরোধ ছিল না। কিভাবে ঘটনা ঘটল তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। বর্তমানে উক্ত এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে লামা সার্কেল অফিসার আল-মাহমুদ জানান। তিনি আরো জানান, ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, সন্দেহভাজন হিসাবে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে হত্যার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। এদিকে ভিক্ষু হত্যা মামলায় তার ছেলে বাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি মামলা দাযের করেছে।

এদিকে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাস্তার পাশে পেতে রাখা বোমা হামলা এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। বর্তমান হত্যাকাণ্ডের সাথে এই বোমা হামলার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

সরজমিনে গিয়ে স্থানীয় উপজাতীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা খুবই চিন্তাগ্রস্থ। একজন ধর্মীয় গুরুকে হত্যা ঘটনার তারা হতবাক। পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির দাবী সহ ঘটনার সুষ্ট তদন্তেরও দাবী তুলেন।

বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় রয়েছেন।

Exit mobile version