parbattanews

বড় হয়ে ভাল শিক্ষক হতে চায় কাউখালীর প্রতিবন্ধী হাসিনা আক্তার

Parbatta News pic

কাউখালী প্রতিনিধি:

‘পা নাইতো কি হয়েছে? সবার আগে স্কুলে যেতে হবে আমাকে, স্কুলে যেতে আমার কোন কষ্ট হয় না সবাই আমাকে একটু সহযোগিতা করুন, আমি পড়তে চাই, লেখাপড়া করে ভাল শিক্ষক হতে চাই’। নিজের আবেগ আর অভিব্যক্তির কথা এভাবেই জানালেন কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী শারিরীক প্রতিবন্ধী হাসিনা আক্তার (১৪)।

উপজেলার রাঙ্গীপাড়া গ্রামে দিনমুজুর মো: তাহের। জীবিকা নির্বাহ করেন রিক্সা চালিয়ে। ১ ছেলে, ৩ মেয়ের সংসার। রিক্সা চালিয়ে কখনো বা দৈনিক মুজুরীতে কাজ করে ২ মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন তাহের। অর্থকষ্টে একটি মাত্র ছেলেকেও লেখাপড়া করানো সম্ভব হয়নি সেও বেকার। তাহেরের যত স্বপ্ন এখন ছোট মেয়ে হাসিনাকে নিয়ে। সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শারিরীক প্রতিবন্ধী ছোট মেয়ে হাসিনাকে লেখাপড়া করাতে।

বাড়ী থেকে কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় দু’কিলোমিটার। জীবিকার তাগিদে বাবা তাহের মিয়া খুব ভোরে রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। শারিরীক প্রতিবন্ধী মেয়েকে রিক্সায় করে স্কুলে নিতে খুব একটা সুযোগ হয় না তার। তবুও থেমে নেই আত্মপ্রত্যয়ী হাসিনা। বাবার রিক্সার অপেক্ষায় থাকলে লেখা পড়ার খরচ যোগাবে কে- এমন চিন্তা মাথায় রেখে এক পায়ে ভর করে বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে স্কুলের উদ্দ্যেশ্যে।

তিন বছর আগে বেসরকারী এনজিও সংস্থা ব্র্যাক এগিয়ে আসে হাসিনার সাহায্যে। ঢাকায় নিয়ে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেয়। হাসিনা ভেবেছিল এ পা লাগিয়ে সে অনায়াসে স্কুলে যাতায়ত করতে পারবে। কিন্তু না তা হয়নি। কৃত্রিম পাটি হাসিনার পায়ের সাথে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। কৃত্রিম পা হাসিনার স্বাভাবিক চলা ফেরার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাড়ায়। এ পা লাগিয়ে হাঁটা চলা করতে তার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। ফলে অনেক টাকা খরচ করে লাগানো কৃত্রিম পা টি বাদ দিয়ে আগের মত এক পায়ের উপর ভর করে চলা ফেরা করতে তাকে।

এদিকে তাহেরের পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় হাসিনার লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত পরিবার। বই, খাতা, কলম, স্কুলের বেতন, প্রাইভেট খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাহেরকে। তবুও থেমে নেই তাহের। যে করে হোক মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে তাকে। গরীব ঘরের সন্তান হাসিনার বড় কোন আকাংখা নেই। একজন শিক্ষক হওয়াই তার স্বপ্ন।

কাউখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের জানান, সে কখনো স্কুল ফাঁকি দেয় না। সবসময় সবার আগে স্কুলে আসার চেষ্টা করে। প্রতিবন্ধী হাসিনাকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা সব ধরণের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। স্কুলের বেতন ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। প্রাইভেট খরচটা যাতে না নেয়া হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদেরও অনুরোধ করেছি। তারপরও আমরা চাই সে লেখাপড়া চালিয়ে যাক।

লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সমাজে বিত্তবানদের কাছে দিনমুজুর সাহায্যের আকুতি জানিয়েছেন। একজন আত্মপ্রত্যয়ী হাসিনার স্বপ্ন পুরণে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এগিয়ে আসুক এটাই সকলের প্রত্যাশা।

যোগাযোগের ঠিকানাঃ মোঃ আবু তাহের, সাং- রাঙ্গীপাড়া, ডাকঘর- কলমপতি- ৪৫১০, কাউখালী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। মোবাইল- ০১৮৬৮-১৩৩৮১৮

Exit mobile version