ভারতের মিজোরাম পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য

fec-image

বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক আগামীকাল। বৈঠকে পাহাড় নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন গ্রুপের পাল্টাপাল্টি শক্তি প্রদর্শন, সীমান্তের ওপারের আশ্রিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তথ্য উত্থাপন করবে বাংলাদেশ।

দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা শান্ত ছিল তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। ইদানীং প্রায় হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ক্রমেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নিরীহ শান্তিপ্রিয় সব সম্প্রদায়ের পার্বত্যবাসীর। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সজাগ তৎপর। তা সত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা চোরাগোপ্তা হানা দিচ্ছে, হামলা চালাচ্ছে, আবার পালিয়েও যাচ্ছে নির্বঘ্নে। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসীদের দমনে আইন-শৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর অভিযান পরিচালনা এবং ধাওয়া করা হলেই তারা পালাচ্ছে সীমন্তের ওপারে। যা কার্যত আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা ব্যবস্থাকে করছে বিঘি্নত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের লাগোয়া প্রতিবেশী ভারতের মিজোরামে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নতুন নতুন আস্তানা তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ওরা জামাই আদরে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে। যা ওপেন সিক্রেট। এমন সুনির্দিষ্ট অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে অবহিত। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা ওপারের আখড়া বা ঘাঁটিতে অবস্থান করে থাকে। আর সেখান থেকে দুর্গম পাহাড়-জঙ্গলাকীর্ণ পথে আচমকা এসেই পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে ফের সটকে পড়ছে।

সীমানার ওপারের আস্তানা থেকে আসা সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রæপের সঙ্গে মিলিত হয়ে কিংবা যোগসাজশে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন জায়গায় গুম, খুন, অপহরণ, তথাকথিত ‘ট্যাক্স’ কালেকশনের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর থেকে এ যাবৎ অর্ধ শতাধিক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছে। অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রের ঝনঝনানি এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের তহবিল গড়ে তুলে পাল্টাপাল্টি শক্তি প্রদর্শনে লিপ্ত রয়েছে একেকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠি-গ্রুপ, দলছুট গ্রুপ।

এদিকে বাংলাদেশ-ভারত দু’দিনের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক আগামীকাল শনিবার শুরু হচ্ছে। বৈঠকে আলোচ্য অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হিসেবে সীমান্তের ওপারে আস্তানা গেঁড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী অপতৎপরতায় জড়িতদের সম্পর্কে বিষদ এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য-খতিয়ান উত্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রায় শান্ত নিরুপদ্রব পাহাড়ে সাম্প্রতিক কয়েক মাসে আচমকা বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসীদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠার অপচেষ্টা এবং তাদের উল্লেখযোগ্য অংশের ভারতে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া সম্পর্কিত অভিযোগসমূহ নিয়ে ভারতীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ ও নয়াদিল্লির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা চায় ঢাকা। একই সঙ্গে স্পর্শকাতর এই ইস্যুর অতি দ্রæত সুরাহার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের এজেন্ডায় এ বিষয়টি শীর্ষে রাখা হয়েছে।

বিগত ডিসেম্বরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স-বিএসএফ-এর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের লাগোয়া মিজোরাম রাজ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদের আস্তানা বা ঘাঁটির অবস্থান রয়েছে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে তথ্য-খতিয়ান সহকারেই অবহিত করা হয়। এ বিষয়ে ভারতের সহযোগিতার মাধ্যমে চাওয়া হয় আশু সুরাহা। প্রসঙ্গত বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অবস্থান করছিল- ভারতের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকার এর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিশেষ করে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘চিহ্নিত’ কতিপয় ব্যক্তিকে ধরপাকড় করা হয়।

বাংলাদেশের মাটি ভারত তথা যে কোনো প্রতিবেশী দেশের যে কোনো সন্ত্রাসীমুক্ত হওয়ায় নয়াদিল্লি তা প্রশংসার সাথে উল্লেখও করেছিল। পারস্পরিক বিনিময় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিদানস্বরূপ সীমান্তের ওপারে তথা ভারতের মাটিতে ঘাঁটি-আস্তানা গেঁড়ে পার্বত্য অঞ্চলে এসে সন্ত্রাসী অপতৎপরতায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও ভারত অনুরূপ কার্যকর পদক্ষেপ দ্রæত নেবে কিনা স্বভাবতই এটাই এখন প্রশ্ন। কেননা অতীতেও মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে এমনকি আস্তানা বা ঘাঁটি বানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী অপতৎপরতা চালানোর ঘটনা ঘটে। এখন এ ধরনের কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি আর কখনই চায় না ঢাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আগামীকাল শনিবার ও ২৮ ফেব্রæয়ারি রোববার স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ভার্চুয়ালি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. শহিদুজ্জামান। ভারতের তরফে নেতৃত্ব দেবেন অজয় কুমার ভাল্লা।

জানা গেছে, দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা- উভয় প্রধান বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে। সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের একের পর এক হত্যার ঘটনা, কাঁটাতারের বেড়া, মাদকদ্রব্য, অস্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, মানবপাচার রোধসহ অন্যান্য বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। এজেন্ডায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যে থাকছে সন্ত্রাসবাদ, জাল নোট, বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ, ভিসাসহ বিভিন্ন বিষয়। সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং তা শূণ্যের পর্যায়ে যাতে নামানো যায় এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখার প্রস্তুতি রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের।

সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, মিজোরাম, সন্ত্রাসী গ্রুপ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন