parbattanews

ভারতে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে প্রবেশকালে নারীসহ ১৫ উপজাতি সন্ত্রাসী আটক

11015320_10205254069406565_1680307759_nপার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :

ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশকালে ১৫ উপজাতি সন্ত্রাসীকে আটক করেছে ভারতীয় পুলিশ।এদের মধ্যে ৩জন মহিলা, ১০ জন চাকমা এবং বাকিরা মারমা। আটক সবাই খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি এলাকার বলে জানা গেছে এবং সকলেই উপজাতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা।

সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তাদেরকে আটক করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।সূত্র অরো জানায়, জেএসএস (সন্ত গ্রুপ) ১৬৫ জনের একটি দল নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ভারতের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।সেখান থেকে প্রথম পর্যায়ে ৩৫ জন কে মনোনীত করে।এর মধ্যে তারা ১৭জনকে রাঙামাটি পাঠায় এবং বাকী ১৫ জনকে নারাইছড়ি পাঠায়। আর ঐ ১৫ জনই ভারতীয় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয় সংকরের বাংলাদেশ সফরের দিনে এই গ্রেফতারকে অনেকেই বাংলাদেশ- ভারত উষ্ণ সম্পর্কের সাথে মিলিয়ে দেখছেন।

নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তারা সেখানে কিভাবে হামলা করতে হবে, কিভাবে হামলা মোকাবেলা করতে হবে, এসব বিষয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটি জেলা ঘেঁষা ভারতীয় সীমান্তে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশী পাহাড়ী যুবকদের স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে একটি ভারতীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ। ভারতীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের স্বশস্ত্র শাখার কর্মী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, আটককৃতরা পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য বলে জানিয়েছে।

এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির ৫৪, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি‘র মারিশ্যা জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল রবিউল ইসলাম রবি (সিগন্যাল) পার্বত্যনিউজ কে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাদের ভারতীয় মাটিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে মিজোরাম এবং ত্রিপুরা হয়ে নাড়াইছড়িতে ঢোকার পরিকল্পনা ছিল।ভারতীয় পুলিশ তাদেরকে অপরিচিত এবং বিচ্ছিন্নতাবাদি হিসাবে আটক করে।তারা নিজেদেরকে শান্তি বাহিনীর সদস্য হিসাবে পরিচয় দিয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে আটককৃতদের বিষয়ে জানার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস‘র সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার মোবাইল নাম্বারে একাধিকবাব ফোন করা হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

এদিকে একের পর এক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আটক হওয়ার ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে সচেতন মহল মনে করছে এর মাধমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা হুমকি বাড়ছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি‘র ক্যাম্প ও নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের বিরোধীতা এসব সন্ত্রাসীদের অবাধ যাতায়াতের স্বার্থেই করা হচ্ছে বলে মনে করে মহলটি। তারা সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারেরও দাবি করেন।

নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, মারিশ্যা জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার প্রায় একশ কিলোমিটারেরও বেশী এলাকা অরক্ষিত। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা ধরলে প্রায় দুশ কিলোমিটারের বেশী সীমান্ত অরক্ষিত আছে। আর সে সুযোগে সেখান দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর যাতায়াত অনেক সহজ। বারবার কোন না কোন উপজাতীয়দের ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া প্রমাণ করে তাদের যাতায়াত কতোটা অবাধ।

এর আগেও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আটকের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য হুমকি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ৫৪, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবি‘র মারিশ্যা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল রবিউল ইসলাম রবি (সিগন্যাল) পার্বত্যনিউজকে বলেন, হুমকি তো আছেই। অরক্ষিত সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা সম্ভব হচ্ছেনা বলেই এসব ঘটনা আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে।

এদিকে নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলোর মতে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও বান্দরবান থেকে পাহাড়ী যুবকদের বাছাই করে স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর এজন্য তারা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের গহীণ অরণ্যকে বেছে নিয়েছে। সেখানে ভারতীয় সন্ত্রাসীগ্রুপ গুলোর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শেষে তারা দেশের অভ্যন্তরে ফিরে আসছে। এদের মধ্যে নারী সদস্যও রয়েছে বলে সূত্রটি দাবি করে।

উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী- ফাইল ছবি।

Exit mobile version