ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে টেকনাফ, পাহাড়ধসে নিহত ৩

fec-image

ভারি বর্ষণে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে। সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত চলা ভারি বর্ষণে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার।

পাশাপাশি বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের ঘটনায় তিন শিশু নিহত ও আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোরে টানা ভারী বর্ষণে এ পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা দূর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) কর্মকর্তা আবদুল মতিন। নিহতদের মধ্যে দুজন হল-টেকনাফের পুরানপল্লান পাড়ার মুহাম্মদ আলমের মেয়ে আফিয়া (৫) ও একই এলাকার রবিউল হাসানের ছেলে মেহেদী হাসান (১০)। আরেক শিশু আবদুল গফুরের ছেলে মো: খায়রুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এদিকে কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর পানিতে ডুবে গেছে বেশিরভাগ এলাকা। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে টেকনাফের হ্নীলা রংগীখালী, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ এলাকা।

অপরদিকে প্রধান সড়কগুলোতে পানি ওঠায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নিম্নাঞ্চল হিসেবে রংগীখালী লামারপাড়ার অবস্থা ছিল ভয়াবহ। সেখানকার বেশিরভাগ নিচতলার বাসা-বাড়ি পানি ঢুকে পড়ে। যার ফলে সেখানকার কোন মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। এবং কোন মানুষ পানি বৃদ্ধির কারনে সাহায্য সহযোগিতা করতে প্লাবিত এলাকায় যেতে পারেনি। অনেক পরিবারে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। গতরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত অধিকাংশ বাড়িতে চুলায় আগুন পর্যন্ত দিতে পারেনি। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

রংগীখালী লামারপাড়ার বাসিন্দা এনজিও কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান-হঠাৎ এভাবে ভারী বর্ষণ হবে কল্পনাও করিনি। কিন্তু প্রতিবছর এ দুর্ভোগের শিকার হলেও এবছর বর্ষার শুরুতেই এ এলাকায় পানি উঠেনি। তাতে আমরা এলাকার মানুষ খুশিতে ছিলাম। কিন্তু বর্ষার শেষে আচমকা অবিরাম বর্ষণের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা দ্রুত এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে দেখছি একটি কার্যকরী স্লুইচগেইট।

এদিকে প্লাবিত এলাকা হ্নীলা রংগীখালীর লামারপাড়ায় দুর্ভোগের খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান হ্নীলা ইউপির নবনির্বাচিত রাশেদ মাহমুদ আলী। তিনি-ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়ি পরিদর্শন করে বিভিন্ন অলি-গলি দেখে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ^াস দেন। এবং স্লুইচ গেইটসহ টেকসই বেরিবাঁধ ও সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে আলোচনা করে কার্যকরী পদক্ষেপের কথা বলেন।

টেকনাফ উপজেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) কর্মকর্তা আবদুল মতিন জানান, টেকনাফের পুরান পল্লান পাড়ার মুহাম্মদ আলমের ও রবিউল হাসান পাহাড়ের পাদদেশে বাড়ি করে বসবাস করে আসছিল। সোমবার থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। মঙ্গলবার ভোররাতে ভারী বর্ষণের ফলে তাদের বাড়ির উপর অংশে থাকা পাহাড়টি ধ্বসে পড়ে। এতে দুই বাড়ির দুই শিশু মাটি চাপায় ঘটনাস্থলে মারা যায়।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রবিউল হাসান জানান, ভারী বর্ষণে টেকনাফ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পানি বন্দী হয়ে আছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি এলাকায় পরিদর্শন করেছি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের সাহায্য দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, টানা ভারী বর্ষণে উপজেলার বেশির ভাগ নীচু এলাকা প্লাবিত হয়ে উপজেলা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড় ধস, ভারি বর্ষণে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন