parbattanews

ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে প্রতিবন্ধি যুবকের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ইউএনডিপি ও জেলা পরিষদের যৌথ সহযোগিতায় ভাগ্য বদলের প্রয়াসে দিনরাত খেটে যাচ্ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধি যুবক সুবন্ত চাকমা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগতা হিসেবে দাঁড় করানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের মৃত-কান্ত মণি চাকমার ছেলে প্রতিবন্ধি যুবক সুবন্ত চাকমা (৩৫), গেল ২০১৮ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও এসআইডি, সিএইচটি-ইউএনডিপি এর যৌথ কার্যক্রম কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের অধিনে বাঘাইছড়িতে “কৃষক সহায়তাকারী ” হিসেবে নিয়োগ পায় সুবন্ত চাকমা।

এরপর ইউএনডিপির পক্ষ থেকে ভার্মি কম্পোস্ট ” সার উৎপাদন ও বিপনন বিষয়ে ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষনে অংশগ্রহণ করে সে, প্রশিক্ষণ শেষে আর্থিক সহায়তা বাবদ সুবন্ত চাকমাকে ৮ হাজার ১ শত টাকা সহযোগিতা করা হয়। ওই টাকা দিয়েই প্রথমে ৮টি গোলাকার রিং স্থানীয়দের ভাষায় (চাড়ি/নান্দা) ও ২ কেজি কেঁচো কিনে শুরু করে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন প্রক্রিয়া।

প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সুবন্ত চাকমার উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যাপক চাহিদা থাকায়, প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার করে একটি খামার ঘর তৈরি করে সেখান থেকে প্রতিমাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ মণ সার উৎপাদন করছেন।

এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৬টন কেঁচো সার উৎপাদন করছেন এরই মধ্যে প্রতি কেজি সার পাইকারী ১৫ টাকা ও খুচরা ২০ টাকা ধরে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ১টন ও স্থানীয় সার ডিলারদের প্রায় ২টন কম্পোস্ট সার সরবরাহ করেছেন। কৃষকের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই সারের বর্তমানে চাহিদার পরিমান দিন দিন বেড়ে চললেও আর্থিক সমস্যার কারণে কেঁচো খামার ঘর সম্প্রসারনসহ কৃষকয়ের চাহিদা অনুযায়ী সার উৎপাদন করতে পারছেন না। ফলে ইচ্ছা থাকার পরও কৃষকরা প্রয়োজনীয় স্যার পাচ্ছে না।

৪ সেপ্টেম্বর সকালে কদমতলী সুবন্ত চাকমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় একাই কচুরিপানা, গোবর, খড় ও কলা গাছের মিশ্রন, কেঁচো দুই হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে সার প্রক্রিয়া করছেন।

সুমন্ত চাকমা বলেন, আমি জেলা পরিষদের অধিনে ইউএনডিপি থেকে ২ দিন প্রশিক্ষণ পেয়ে এই কাজে আসার উৎসাহ পাই, শারীরিক প্রতিবন্ধি ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হওয়াতে আশানরুপ সাফল্য অর্জন করতে পারছিনা, সরকারি বা কোন সংস্থার সহযোগিতা পেলে এই প্রকল্পটি আমি অনেকদূর নিয়ে যেতে পারবো।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের উপেজেলা এফএফএস সমন্বয়কারী মিশন চাকমা বলেন, সুবন্ত একজন প্রতিবন্ধি যুবক আমরা চিন্তাভাবনা করে তাকে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের উপর ২ দিন প্রশিক্ষণ দিয়ে কিছু উপকরন ক্রয় করে দেই। সে আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভালো উৎপাদন করছেন। এখন আরো অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রয়োজন তাহলে তার উৎপাদিত কম্পোস্ট সার প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যাবে। এরইমধ্য সুবন্ত চাকমার প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা নিহার রঞ্জন রায় ও মৎস কর্মকর্তা নবআলো চাকমা, পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

Exit mobile version