ভাসানচরের প্রতি রোহিঙ্গাদের আগ্রহ বাড়ছে। এ মাসের প্রথমে ১৬৪২ জন এবং গত বুধবার ১৮০৪ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সামনের বছর আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠানো হবে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সব কথা বলেন।
দ্বিতীয় দফায় প্রথমবারের থেকে বেশি রোহিঙ্গা কেন গেলো জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) জানান, ‘আমাদের ধারণা ছিল কম হবে সংখ্যাটি। কিন্তু আমাদের ধারণার দ্বিগুণ সেখানে স্বেচ্ছায় গিয়েছে। এর পেছনে প্রথম গ্রুপের তথ্য আদান-প্রদানের একটি অবদান আছে।’
সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেকে ভাসানচর সফর করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ’প্রথম ব্যাচের যে ফিডব্যাক পেয়েছি সেটিতে দেখা গেছে তারা মোটামুটি খুশি। আমরা দেখেছি যারা গেছে তারা যখন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ক্যাম্পে কথা বলেছে, তাদের ইতিবাচক মনোভাবই জানিয়েছে। তারা বলেছে আমরা ভালো আছি এবং তোমরা যদি আসতে চাও তবে এখানে আসতে পারো।’
সামনের বছর আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আপাতত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের। তবে এমন কোনও ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো না, যাতে মনে হবে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত বা স্থায়ী করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি কক্সবাজারে অনেক বেশি চাপ পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এছাড়া উগ্রবাদের ঝুঁকিতো আছেই। সুতরাং আমাদের কৌশল হচ্ছে ঝুঁকি এবং মানুষের উপস্থিতি কমানো। এর অংশ হিসেবে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
তবে ভাসানচরে স্থানান্তর সমাধান নয় এবং আসল সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের সসম্মানে রাখাইনে ফেরত পাঠানো বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারে। এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ- ভারত শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদিও বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকবে, যাতে করে মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে না যাই। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি আসিয়ান একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। মিয়ানমারের কাছের প্রতিবেশী যেমন ভারত, চীন এবং কিছুটা দূরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাতিসংঘ সবাই মিলে চেষ্টা করলে রোহিঙ্গারা যখন ফেরত যাবে তখন তাদের আত্মবিশ্বাস দেওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জীবিকার ব্যবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিতির প্রয়োজন হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
কোভিডের কারণে ত্রিপক্ষীয় মেকানিজম কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোভিড এখন অনেক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। তবে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা ছিল মিয়ানমারের নির্বাচন, যা নভেম্বরে হয়ে গেছে। তারা এর কথা বলে দেরি করেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে থেকেই আমরা কথা বলা শুরু করেছি। এখন ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা জোরদার হচ্ছে এবং কথাবার্তা চলছে। আমরা আশা করবো সামনের বছরে, হয়তো সামনের মাসেই- আমরা তৈরি আছি, চীনেরও আগ্রহ আছে। এখন মিয়ানমারের গ্রিন সিগন্যাল পেলে আমরা আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে পারবো।’
সব সাহায্য সংস্থার ভাসানচরে কাজ করার সুযোগ থাকবে, তবে দেশের আইন-কানুন মেনে চলতে হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাইরে যেসব সংস্থা উদ্বাস্তু অধিকার নিয়ে কাজ করে তাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে ভাসানচর নিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে আমরা সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে চাই এবং করবো। কারণ, ওইসব সংস্থা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যে বিষয়গুলো তুলে ধরে সেটি আমাদের রোহিঙ্গা কৌশলে সহায়ক হয় অনেক সময়ে। সুতরাং তাদের সঙ্গে বৈরিতা আছে সেটাও না।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন