parbattanews

ভুজপুরের পাহাড়ে ১৭ঘন্টা মাটি খুঁড়ে অপহৃত এনজিও কর্মকর্তার গলিত লাশ উদ্ধার

ফটিকছড়ির ভুজপুরের হেঁয়াকো বাজার হতে গত বছর ২২ নভেম্বর অপহৃত ঢাকার এনজিও কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে(৪৩) অপহরণকারিরা পিটিয়ে হত্যার পর গুম করতে লাশটি নির্জন পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৫০ ফুট গভীর পরিত্যক্ত কূপে ফেলে দেয়। মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ এক বছর পর বৃহষ্পতিবার (১৯ নভেম্বর) ভুজপুরের বাগানবাজার ইউনিয়ের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা নুরপুরে প্রায় ৫০ ফুট গভীর মাটি খুঁড়ে ঐ কূপ থেকে তার গলিত লাশটি উদ্ধার করে পুলিশের বিশেষ শাখা পিবিআই।

প্রায় ১৭ ঘন্টার এ উদ্ধার অভিযানে মাটি খুঁড়তে ব্যবহার করা হয় স্কেভেটর। কোদাল ও শাবল নিয়ে মাটি খুঁড়ার কাজ নিয়োজিত ছিল বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। পিবিআইর চট্টগ্রাম জেলার এসপি নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে এ উদ্ধার কাজ চালানো হয়। পিআ্ইবি এ ঘটনার সাথে জড়িত তিন ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করেছে। তক্ষক বিক্রির কথা বলে নিহত হেলালকে হেঁয়াকোতে এনে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার সাথে হেলালের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও জড়িত ছিল।

পিবিআই’র জালে ধরা পড়া ঘটনার সাথে জড়িত বিল্লাল হোসেন(৩০) হেলালের লাশ গুমের ঐ স্থানটির সন্ধান দেয়। পিবিআই বুধবার(১৮ নভেম্বর) তাকে আটক করে। সে বাগানবাজারের লালমাই নামক এলাকার বাসিন্দা। একইদিন ঐ এলাকা থেকে রাজা(২৮) নামে আরেক আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার(১৯ নভেম্বর) লাশের উদ্ধার অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলে পুলিশের হেফাজতে থাকা বিল্লাল জাানায়, ঐ কূপের পাশে বাঁশঝারের নিচে তারা ৮-১০জন মিলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার পর হেললের মরদেহ পরিত্যক্ত কূপে ফেলে দেয়। পরে কিছু মাটি কেটে কূপে ফেলা হয় লাশটি চাপা দিতে।

সে জানায়, মুক্তিপণের টাকা না দেয়ায় তাকে হত্যা করা হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা(আইও) পিবিআই’র ইন্সপেক্টর মো: আবু হানিফ জানান, গত মার্চ মাসে ভুজপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইতে যাওয়ার পর তিনি তদন্ত কাজ শুরু করেন। জুলাই মাসেই জাকির হোসেন নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

তিনি বলেন, জাকিরের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে বিল্লালকে ধরার জন্য তৎপরতা শুরু করা হয়। মোবাইল ট্রেকিংসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার ও সোর্স নিয়োগ করা হয় তাকে ধরতে। শেষ পর্যন্ত ১৮ নভেম্বর তার এক নিকট আত্মীয়র জানাজার নামাজ থেকে তকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে হেলালকে হত্যা ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করার পর সেদিনই তাকে সাথে ঐ পরিত্যক্ত কূপ দেখে আসেন তারা।

বৃহস্পতিবার সকাল হতে লাশ উদ্ধারে মাটি খুঁড়া শুরু করা হয়। কূপটি অত্যন্ত সরু ও গভীর হওয়ায় স্কেভেটর এনে কূপের পাশে মাটি খুঁড়ে গলিত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ১৭ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মরদেহটি পাওয়া যায়। নিহতের দুই স্ত্রী পিংকি ও ঝর্না উদ্ধার করা মরদেহটি তাদের স্বামী হেলালের বলে সনাক্ত করেন। উদ্ধার করা মরদেহের দুই পায়ের মাংসপেশী পঁচেগলে গেলেও শরীরের ওপরের অংশ পুরোপুরি গলেনি।

মরদেহ উদ্ধার অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা হতে শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। লোকজনের ভীড় সামাল দিতেও হিমশিম খায় পুলিশ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেলে জেনারেটর এনে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করে উদ্ধার কাজ চালানো হয়।

নিহত হেলালের দ্বিতীয় স্ত্রী ও মামলার বাদী কানিজ ফাতেমা পিংকি বলেন, গত বছর ২০ নভেম্বর বাবুল সিকদার নামে এক বন্ধুর সাথে তার স্বামী খাগড়াছড়ি বেড়ানোর কথা বলে ঢাকার মুগদাপাড়ার বাসা থেকে তারা বের হন। ২২ নভেম্বর অপহরণারিরা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তাদের কাাছে কাছে ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ফোন পেয়ে হেলাল উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী ঝর্ণা ও হেলালের বন্ধু এনায়েতকে নিয়ে পরদিন অর্থাৎ ২৩ নভেম্বর ভোর বেলায় হেঁয়াকো এসে পৌঁছেন। তারা অপহরণকারিদের সাথে ফোনে যোগায়োগ করলে মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর জন্য ৪টি বিকাশ নম্বর দেয়া হয়। টাকার পরিমাণ নিয়ে দরকষাকষির এক পর্যায়ে অপহরণকারিরা ফোনের সুইচ বন্ধ করে দেয়।

ঘটনাটি ভুজপুর থানার পুলিশকে অবহিত করে তাকে উদ্ধারে সহযোগিতা চাওয়া হয়। তিনি বলেন, অপহরণকারিরা হেলালের সাথে তার বন্ধু বাবুলকেও নিয়ে যায়। কিন্তু পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, মূলত: বাবুলও অপহরণ ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। এছাড়া হেলালের অপর বন্ধু লিটন, মুনির ও আরিফও ঘটনার সাথে জড়িত। তিনি বলেন, লাখ টাকায় তক্ষক কিনে কোটি টাকায় বিক্রি করার লোভ দেখিয়ে বাবুলসহ বন্ধুরা হেলালকে রাজী করায়।

এ তক্ষক কেনার কথা বলে বন্ধুরা পরিকল্পিতভাবে তাকে ফটিকছড়িতে নিয়ে আসে। মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল তাদের আসল উদ্দেশ্য। মুক্তিপণ না পেয়েই ঐ বন্ধুরা ফটিকছড়ির অপহরণচক্রের লোকজন মিলে হেলালকে হত্যা করে। তিনি অভিযোগ করেন, ভুজপুর থানার পুলিশ তাদের কোন সহযোগিতা করেনি। প্রথমে তারা মামলাও নিতে চায়নি। পরে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে জানানোর কারণে তারা মামলা নিলেও কাজ করেনি।

হেলালের দুই স্ত্রী পিংকি ও ঝর্না তাদের স্বামীর অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করেন। পিংকি হেলালের ঘাতক বন্ধু বাবুল, আরীফ, লিটন ও মুনিরকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। হেলালের প্রথম স্ত্রীর একমাত্র পুত্র ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ১১ বছরের একটি ছেলে ও ৪ বছরের একটি মেয়ে আছে।

Exit mobile version