ভুজপুরে নেশার খরচের জন্য স্বর্ণের চেইন না দেয়ায় বিষ খাইয়ে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ

fec-image

ভুজপুরের বাগানবাজারে নেশার টাকার জন্য গলার সোনার চেইন চেয়ে না পাওয়ায় স্ত্রীকে বেদম প্রহার করে জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আকলিমা আকতার(১৯) নামে ওই গৃহবধূ রামগড় হাসপাতালে তিনদিন যাবৎ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) মারা যান। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছলা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে আকলিমা আক্তারকে বিয়ে দেয়া হয় ফটিকছিিড়র ভুজপুর থানার বাগানবাজার ইউনিয়নের লালমাই গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে আমজাদ হোসেন ওরফে আমানের সাথে। গত জুলাই মাসে তাদের প্রথম শিশু সন্তান জন্মের পর পরই মরা যায়। বিয়ের পর থেকেই মাদকাসক্ত স্বামী আমান নেশার টাকার জন্য স্ত্রীর ওপর নানা নিপীড়ন চালাতো। বিয়ের সময় বাবার দেয়া স্বর্ণালংকার একটার পর একটা সে জোর করে নিয়ে যায়। সর্বশেষ গলার সোনার চেইনটি নিতে সে আকলিমাকে চাপাচাপি করে । কিন্তু স্ত্রী রাজী হয়নি। গত ৯ ডিসেম্বর চেইনটি চেয়ে না পাওয়ায় স্ত্রীকে বেদম প্রহার করে সে।

এসময় আমান মানিকছড়িতে তার এক শ্যালকের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে আকলিমার আর্তচিৎকার শোনায় এবং আকলিমাকে নিয়ে যেতে তার বাবাকে খবর দিতে বলে। এর কিছুক্ষণ পরই লালমাই গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে আকলিমাকে রামগড় হাসপাতালে ভর্তি করানোর খবর পেয়ে তার বাবা, ভাই ও ভগ্নিপতি হাসপাতালে ছুটে আসেন। আকলিমার ভগ্নিপতি আহমেদ নূর বলেন, হাসপাতালে এলে আকলিমা তাদেরকে জানায় স্বামী আমান তার গলার সোনার চেইন না পেয়ে তাকে অমানুষিকভাবে মারপিট করেছে। এক পর্যায়ে সে জোরপূর্বক তাকে বিষ খাইয়ে দেয়।

তিনি আরও জানান, ঐ সময় আকলিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের দাগও দেখেছেন। আকলিমার বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমানের বড় ভাই সাদ্দাম ও এক প্রতিবেশি মহিলা মূমুর্ষ অবস্থায় আকলিমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। উন্নত চিকিৎসর জন্য ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যেতে বললেও সাদ্দাম রাজী হয়নি। মেয়েটি তিন দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে শনিবার দুপুরে মারা যায়। মারা যাওয়ার সাথে সাথে হাসপাতাল থেকে সাদ্দাম ও তার বোন রোমিজা দ্র্রুত পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, ৯ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার স্বামী একবারও তাকে দেখতে আসেনি। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে আকলিমাকে মারধর এবং বিষ খাইয়ে দেয়ার কথা সে তাদের কাছে বলে গেছে। তিনি বলেন, নেশাগ্রস্ত স্বামী আমজাদ হোসেন আমানই তার মেয়েকে হত্যা করেছে। অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য আমজাদ হোসেন আমানের মোবাইল নম্বরে কল দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

শনিবার দুপুরে রামগড় হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর খবর পেয়ে পুলিশ আকলিমার মরদেহ উদ্ধার করে। রামগড় থানাার সহকারি পরিদর্শক(এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।

এদিকে, আকলিমার ভগ্নিপতি আহমেদ নূর জানান, শনিবার রাতে তারা ভুজপুর থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তাদেরকে অপমৃত্যু মামলা বা সাধারণ ডায়রি করার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ব্যপারে ভুজপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রামগড়, হত্যা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন