ভুয়া সনদে খাগড়াছড়িতে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেল রাঙামাটির বাসিন্দা

fec-image

খাগড়াছড়িতে জাতীয়তা সনদ জালিয়াতি করে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন রাঙ্গামাটির এক ব্যক্তি। সবশেষ গেল জুন মাসে পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনস্থ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের নিয়োগে এ অনিয়মের অভিযোগ উঠে। আত্মীয়ের মাধ্যমে সনদ সংগ্রহের কথা স্বীকারও করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি।

ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র দিয়ে নিয়োগ ঘটনায় নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব বাছাই কমিটিকে দায়ী করেছেন। অপর দিকে ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলেছেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা।রাঙ্গামাটি পৌর এলাকার উৎপল চাকমার ছেলে তিংকু চাকমা। অথচ তিনি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদ ও সার্কেল প্রধানের জাতীয়তা সনদ জালিয়াতি করে চলতি বছরের ১০ জুন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনস্থ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে খাগড়াছড়ির স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার শর্ত থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ ও সার্কেল প্রধানের সনদ জালিয়াতি করে আবেদন করেন রাঙ্গামাটি পৌর এলাকার উৎপল চাকমার ছেলে তিংকু চাকমা। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা ও নিকট আত্মীয়ের সহযোগীতায় জাল সনদ সংগ্রহ করে আবেদন ও চাকরি পায় অভিযুক্ত ব্যক্তি। তিনি এখন খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি সরকারী প্রাথমিকি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক। নিজের দ্বৈত বাসিন্দা সনদ ও আত্মীয়দের সহযোগীতার কথা অকপটা স্বীকারও করেন।

পার্বত্য তিন জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সার্কেল প্রধানের কার্যালয় স্থায়ী বাসিন্দা সনদ দিয়ে থাকে। কতটা সহজে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ পাওয়া যায় তিংকু চাকমার বক্তব্যে তা স্পষ্ট। তারপরও এ সনদের সত্যতা যাচাইয়ে দীঘিনালার ২ নং বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরও ভয়ানক তথ্য। এ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক সচিবদের কথায় মিলে সনদ জালিয়াতির সত্যতা। আর তিংকু চাকমা নিজের যে ঠিকানা ব্যবহার করেছেন সে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা চিনেন না তাকে।

অভিযুক্ত শিক্ষক তিংকু চাকমা বলেন, চাকরীর আবেদন করার জন্য এক আত্মীয়কে দিয়ে বোয়ালখালী থেকে জাতীয়তা সনদ গ্রহণ করেছি। পরিবার রাঙ্গামাটি পৌর এলাকায় বসবাস করে। সেখানকার পৌরসভা থেকে আরেকটি সনদ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়েছে। এ সব নিয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) এত কী সমস্যা? কর্তৃপক্ষ দেখেশুনে আমাকে চাকরি দিয়েছেন।

দীঘিনালার ২নং বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অরুনাংশ তালুকদার বলেন, তিংকু চাকমা নামে যে জাতীয়তা সনদের কপি দেখিয়েছেন সেটির কোন নথি অফিসে সংরক্ষিত নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমাদের চেয়ারম্যানই জানবেন হয়ত।

দীঘিনালার ২নং বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বলেন, তিংকু বা উৎপল নামের কাউকে আমি চিনছি না। আমি নিজেই কাঠাল তলী গ্রামের মানুষ। এ নামের কেউ আমাদের গ্রামে থাকেন না।

মূল স্থায়ী বাসিন্দা সনদ ও সব সত্যয়িত কাগজে তারিখ না থাকা সহ নানা অসংগতি থাকার পরও আবেদন কি ভাবে গ্রহণ হয়েছে তার সদুত্তর নেই নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিনের। আবেদন যাচাই বাছাই কমিটির ওপর দোষ চাপিয়ে দেন তিনি।

খাগড়াছড়ি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়ে বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে আগামী রবিবার এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

সুষ্ঠু তদন্তের ভুয়া বাসিন্দা সনদে খাগড়াছড়িতে সরকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ ও এ অনিয়মে সহায়তাকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী সচেতন মহলের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন