parbattanews

ভয়াবহ স্মৃতির ২৯ এপ্রিল আজ: এখনো অরক্ষিত উপকূলীয় এলাকা

Kutubdia 02

স্টাফ রিপোর্টার:

আজ সে ভয়াল ২৯ এপ্রিল। বাংলাদেশের উপকূলবাসীর স্বজন হারানোর দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে এক মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা। সেই থেকে ভয়াল ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। ভয়াবহ স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অরক্ষিত বাংলাদেশের উপকূল। এখনো আতঙ্কে দিনরাত কাটে উপকূলবাসীর। দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী ও অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। তবে
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের দিবাগত মধ্যরাতে কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস আঘাত হানে। এতে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটার পাশাপাশি নিখোঁজ হয় ১ লাখ মানুষ। ৭০ হাজার গবাদী পশু মারা যায়। ঐ রাতের তান্ডবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে সরকারী হিসেবে রয়েছে। তবে বেসরকারী হিসেবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে জানালেন, কোষ্টাল জার্নালিষ্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আতা উল্লা খাঁন।
‘গরকির ছুবলে ছেলে হারায় মাকে, মা হারা তার প্রিয় সন্তানদের, স্বামী হারায় স্ত্রীকে, স্ত্রী হারায় তার প্রাণের প্রিয়া স্বামীকে’। সে ভয়াল রাতের স্মৃতি মনে পড়লে উপকূলবাসী এখনো আঁতকে উঠে। সে প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ের ২৪ বছর অতিবাহিত হলেও কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত। তার সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এখনো বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। ফলে বিভিন্ন উপকূলীয় লোকালয়ে সাগরের লোনাজল এখনো প্রবেশ করছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর উপজেলা চেয়ারম্যান হোছাইন ইব্রাহিম বলেন, গত ২০ বছর ধরে তার এলাকায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িঁবাধ খোলা রয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাবিবুর রহমান জানান, কক্সবাজারের ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়ি বাধেঁর মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার এখনো খোলা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ৮৫ কিলোমিটার। এসবের সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ফলে উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত।
এদিকে ভয়াল ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ ২৯ এপ্রিল দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। তার মধ্যে রয়েছে ফাতেহা, কোরআনখানি, মিয়াদ মাহফিল, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, কাঙ্গালীভোজ, চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কোষ্টাল জার্নালিষ্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ ২৯ এপ্রিল স্মৃতি পরিষদ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পৃথক আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আজ কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, হাতিয়া, আনোয়ারার প্রতিটির মসজিদে বিশেষ মোনাজাত, ঘরে ঘরে চলবে ফাতেহা। ১৯৯১ সালের এ দিনে সবচেয়ে বেশী প্রাণহানী ঘটে কক্সবাজারের মহেশখালীর ধলঘাটা উপ-দ্বীপে। এ ইউনিয়নের সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য কামরুন নাহার রুবি জানান, এখানে এমন কোন বাড়ী বা ঘর নেই যে বাড়ী বা ঘর থেকে ৫/৬ জন লোক মারা যায়নি। তাই এ দিনটি আসলে এখনো এখানকার প্রতিটি বাড়ীতে কান্নার রোল পড়ে যায়। ধলঘাটা তরুণ ছাত্রসংঘের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, ১৯৯১ সালের পর থেকে ধলঘাটার বিশাল এলাকার বেড়ীবাঁধ এখনো খোলা রয়েছে। সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ আজ বিকালে কক্সবাজার পৌরসভা মিলনায়তনে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে।
কুতুবদিয়া দ্বীপের বাসিন্দা সাংবাদিক আবদুল্লাহ নয়ন বলেন, সে ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে চোখ এখনো ঝাপসা হয়ে আসে। সে রাতের কথা কোনভাবেই ভুলে যাওয়ার নয়। তবে উপকূল এখনো অরক্ষিত।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, সরকার কক্সবাজারের উপকূলকে রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উপকূলবাসীরবাসীর একটাই দাবী, তা হলো টেকসই বেড়িবাধঁ নির্মাণ করে যেন দেশের উপকূলকে সাগরের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করা হয়।
Exit mobile version