মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ও তিন ইউপি সদস্যসহ ৯জন কারাগারে, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

পেকুয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরীর উপর হামলা ও তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় একই ইউপির বহুল আলোচিত বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ্ ওয়াসিম সহ ৯ আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত।

বৃহস্পতিবার (৮মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাকিম তৌফিক আজিজ আসামিদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।

এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন এলাকাবাসীরা। উৎসুক স্থানীয়রা ইউনিয়নের কাজী মার্কেট, সাতঘর পাড়া ও লঞ্চঘাট স্টেশন এলাকার জনসাধারণের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, ইউনুস চৌধুরীর উপর হামলা এবং তার বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক দুটি মামলার ১৬ আসামিকে অন্তরবর্তীকালীর জামিন দেয় উচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার এদের মধ্যে ১৩ আসামি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। এসময় আদালত ৪ আসামির জামিন মঞ্জুর এবং ৯ আসামির জামিন না মঞ্জুর করে আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন, মামলা দুটির প্রধান আসামি মগনামা ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম, জয়নাল, শাহাবুদ্দিন, মইন উদ্দিন, ওবায়েদ উল্লাহ, নুর মো. মাদু, জসিম, সাকের উল্লাহ ও নুর মো. বদ। একইসাথে আদালতে হাজির না হওয়ায় লিটন, মানিক ও জিয়াবুল নামের তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী বাবুল বলেন, মগনামার হিটলার ওয়াসিমের পতন শুরু হয়েছে। গত দুই বছর ধরে তার হাতে জিম্মি ছিল ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষ। তার অত্যচারে এলাকা ছাড়া হয়েছে জনপ্রতিনিধি সহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ। তার সশস্ত্র বাহিনীর ভয়ে এসব অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়নি কেউ। তার বিষাক্ত গ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারবে বলে ধারণা করেনি মগনামাবাসী। তাই আদালতের এই রায়ে প্রাণসঞ্চার হয়েছে সাধারণ মানুষের।

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন এমএ, মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা, মগনামা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রুকন উদ্দিন, মগনামা ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুলতান মো. রিপন, ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নাজেম উদ্দিন ও ৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজেম উদ্দিন বলেন, ইয়াবা ব্যবসায় উপার্জিত কালো টাকা দিয়ে মগনামায় সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলী ঘনিষ্ঠ সহচর শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম। যার কাছে জিম্মি ছিল ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ সহ্রাধিক মানুষ। তার এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তার উপর নেমে আসতো বিবিধ অত্যাচারের খড়ক। কিন্তু সবকিছুর শেষ আছে। ওয়াসিমেরও শেষ দেখবে মগনামার সাধারণ মানুষ।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে পুরো মগনামায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ওয়াসিম। চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ জবর দখলকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের উপর হামলা, অস্ত্র ও মাদক দিয়ে ফাঁসানো নিত্যনৈমিত্তিক কাজ ছিল তার। এছাড়া ফুলতলা স্টেশনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১৭জনকে গুলিবিদ্ধ, ডাকাতি, ধর্ষণ চেষ্টা ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি ওয়াসিমের নির্দেশে তার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আমাকে হত্যা চেষ্টা চালায় এবং আমার বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন