parbattanews

মণিপুরে আরেক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে গত মে মাসের শুরুতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কুকিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পরলে নির্মম হত্যাকাণ্ড, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো একের পর এক ভয়াবহ অপরাধ ঘটতে। দাঙ্গার কয়েক সপ্তাহ পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো ও পরে তাদেরকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা ভারত। এবার সামনে এসেছে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আরেকটি রোমহর্ষক ঘটনা। ভুক্তভোগী ওই নারী(৩৭) মামলা করার পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে এলো।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূ পুলিশের কাছে ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিয়ে গত বুধবার (৯ আগস্ট) বিষ্ণপুর পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগকারী ৩৭ বছর বয়সী ওই নারী মণিপুরের চূড়চন্দ্রপূরের বাসিন্দা। এই নারী জানিয়েছেন— গত ৩ মে তাদের বাড়িতে দুর্বত্তরা আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর দুই ছেলে, ভাগ্নি এবং ননদকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এ সময় হোঁচট খেয়ে পরে গেলে তার ননদ তাকে উদ্ধারে ছুটে আসেন। পেছন থেকে কয়েকজন ছুটে আসছে দেখে তিনি তার ননদকে তার ভাগ্নিসহ তার দুই ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। এর পরই একদল পুরুষ তাকে ঘিরে ফেলে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর তারা যৌন হয়রানি শুরু করে। তিনি বাধা দিলেও তাদের ক্ষান্ত করতে পারেননি। তাকে পালা করে ধর্ষণ করেন তারা। ওইদিনই মণিপুরে দুই সম্পদ্রায়ের মধ্যে দাঙ্গা চূড়ান্ত পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে এতদিন ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি তিনি কাউকে জানাননি। কিন্তু যখন দেখতে পেয়েছেন অনেকেই এ বিষয়গুলো নিয়ে মুখ খুলছেন তখন তিনিও নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনাটি প্রকাশ করার শক্তি ও সাহস ফিরে পান।

তিনি বলেছেন, ‘পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে, একঘরে হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে আমি বিষয়টি কাউকে জানাইনি। দেরিতে অভিযোগ করার কারণ হলো সামাজিক কলঙ্কের ভয়… আমি এমনকি কয়েকবার নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম।’ তিনি এখন বাস্তুচ্যুতদের জন্য তৈরি একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতের দণ্ডবিধি ৩৭৬ডি, ৩৫৪, ১২০বি এবং ৩৪ ধারায় বিষ্ণপুর পুলিশ স্টেশনে মামলা (জিরো এফআইআর) করা হয়েছে।

ওই নারীর অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ মে দুর্বত্তরা তার এবং প্রতিবেশীদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া শুরু করে। এরপর জীবন বাঁচাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দ্রুত তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি অভিযোগপত্রে বলেছেন, ‘আমি আমার ভাগ্নি আমার পেছনে নেই এবং দুই ছেলেকে হাতে ধরে আমার ননদকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে থাকি। আমার ননদও একটি শিশুকে কোলে নিয়ে রেখেছিল এবং সে আমার আগে পালিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি রাস্তায় পড়ে যাই এবং ওঠে দাঁড়াতে পারছিলাম না। তখন আমার ননদ আমার কথা অনুযায়ী ভাগ্নি ও আমার দুই ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যখন আমি ওঠে দাঁড়াতে সমর্থ হই, পাঁচ থেকে ছয় দুর্বৃত্ত আমাকে ধরে ফেলে। তারা আমাকে মৌখিকভাবে নির্যাতন শুরু করে এবং হামলা করে। আমার বাধা সত্ত্বেও তারা আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর তারা আমাকে যৌন নির্যাতন শুরু করে।’

ওই নারী জানিয়েছেন এ ঘটনার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মানসিক প্রশান্তি পেতে হাসপাতালেও যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে এ ভয়াবহ ঘটনা বর্ণনা করতে না পেরে চলে আসেন। এই নারী তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।

মণিপুর পুলিশ সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, ৩ মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত এই রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে অন্তত সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মামলা করা হয়েছে।

Exit mobile version