parbattanews

মণিপুরে স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা

জাতবিদ্বেষ দাঙ্গায় ‘গৃহযুদ্ধ’ ছড়িয়ে পড়া ভারতের মণিপুর রাজ্যের আরও এক নৃশংস ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এলো। সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামী এস চূড়াচাঁদ সিংহের বয়স্ক স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। থানায় অভিযোগও দায়ের করেছে মৃতার পরিবার।

রবিবার (২৩ জুলাই) এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ, ঘটনাটি গত ২৮ মের। অভিযোগ, ওইদিন কাকচিং জেলার সেরোও গ্রামে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ব্যক্তি হাতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেই সময় ওই বাড়ির ভেতরে ছিলেন ওই স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রী ৮০ বছর বয়সি ইবেটোমবি।

বেশ কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আগুন নেভান গ্রামবাসীরা। পরে বাড়ির ভেতর থেকে মেলে ওই বৃদ্ধার মাথার খুলি, পোড়া হাড়গোড়। এ প্রসঙ্গে বৃদ্ধার নাতি প্রেমকাঁটা (২২)

এদিন এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, দুষ্কৃতকারীরা তাকেও হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। ঠাকুরমাকে বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে হাতে গুলি লাগে তারও। প্রেমকাঁটার কথায়, ‘আমি ঠাকুরমাকে বাঁচাতে গেলে তিনি বলেন, এখন পালিয়ে যা। কিছু সময় পরে আমায় নিতে আসবি।’ এটাই ছিল তার শেষ কথা। কিন্তু ঠাকুমাকে আর আমি রক্ষা করতে পারিনি, আক্ষেপ ঝরে পড়ে নাতির গলায়।

ওই ঘটনার প্রায় দুমাস পর জ্বালিয়ে দেওয়া সেই বাড়ির কাছে গিয়েছিলেন প্রেমকাঁটা। সেখানে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে একটি ছবি উদ্ধার করেন তিনি। সেই ছবিতে তার ঠাকুরদার সঙ্গে রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি কালামও। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই ও পাহাড়ি সংখ্যাগরিষ্ঠ কুকি উপজাতিদের সংঘর্ষে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরের সেরোও রাজ্যের দাঙ্গাকবলিত গ্রামগুলোর মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। ৩ মের আগের দিন পর্যন্তও গ্রামটি ছিল ছবির মতো সুন্দর। কিন্তু এখন বাড়ির পর বাড়ি পুড়ে ছাই। দেওয়ালে দেওয়ালে বুলেটের গর্ত। মাথার খুলি আর পোড়া হাড়। ওই গ্রাম ঘুরে এনডিটিভির সাংবাদিক এ খবর দিয়েছেন।

গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই বিজেপিশাসিত রাজ্যে। মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফশিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপরই কুকিসহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর সংগঠনগুলো তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই দাঙ্গার সূচনা।

Exit mobile version