মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই শত বাঁধার মুখেও কেটে ফেলা হচ্ছে লামা উপজেলা পরিষদের ৫৬টি ছায়াবৃক্ষ

Tree Cut Photo Lama-02, 29 Mar'14

লামা প্রতিনিধি:
বান্দরবানের লামা উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকার শোভাবর্ধণ ও ছায়া দানকারী সবুজ ঘেরা বেষ্টনী দ্রুত কেটে ফেলা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদ চত্বর, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত চত্বর এবং একমাত্র শিশু পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে সৃজিত নানা প্রজাতির ৫৬টি বৃক্ষ নিলাম দেখিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি না নিয়েই গত চারদিন ধরে এ গাছ কাটা চলছে।

গত মঙ্গলবার দুুপুরে আদালত চলাকালীন সময় আদালতের পাশের গাছ কাটার ফলে বিচার কাজে ব্যহত হওয়ায় পুলিশ দুজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয়। ওই দিন গাছ কাটা বন্ধ হলেও গত বুধবার সকাল থেকে পুনরায় গাছ কাটা শুরু হয় এবং তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গোটা বিশ্বের সঙ্গে দেশবাসীও সরব, সেখানে গাছগাছালির সবুজ বনায়নের বদলে বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি, উপজেলা চত্বরে ছায়াদানকারী এ সবুজ বেষ্টনী ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা না হলে পার্কে আসা কোমলমতি শিশুরা ও দূর দুরান্ত থেকে আসা বিচার প্রার্থীরা হারাবে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ। অন্যদিকে গাছ কাটায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন। অকারণে এবং বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বিহীন এতগুলো গাছ বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, গত ১২-১৩ বছর আগে উপজেলা পরিষদ এবং আদালত সংলগ্ন ও শিশু পার্ক চত্বরে তৎকালীন নির্বাহী অফিসার এসকল গাছ রোপন করেন। গাছগুলো বর্তমানে ডালপালা গজিয়ে অনেক বড় হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এবং আদালতে দূর-দুরান্ত থেকে আসা আগন্তুকরা এসকল গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেন। পাশের শিশু পার্কে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা গাছের ছায়ায় ঠান্ডা আবহাওয়ায় খেলাধূলা করে। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের অভ্যন্তরে অফিস ভবন, বাসভবন ও বৈদ্যুতিক লাইনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে বড় আকারের ৫৬টি জীবিত গাছ নিলামের মাধ্যমে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় স্থানীয় এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। অথচ এ গাছের স্থানীয় বাজার মূল্য প্রায় ৪ লাখ টাকা। সরকারী গাছ কাটার বিষয়ে বন আইন মোতাবেক অনুমতির প্রয়োজন থাকলেও এখানে তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

নিলামগ্রহীতা মো. আলা উদ্দিন জানান, গত ১২ মার্চ তারিখ নিলামের মাধ্যমে গাছগুলো তিনি ক্রয় করেছেন। গত মঙ্গলবার গাছ কাটতে গেলে কিছু সমস্যা হয়। ইতিমধ্যে ১০-১২টি গাছ কাটা হয়েছে বলেও তিনি জানান।  
গত বৃহস্পতিবার ফাঁসিয়াখালী থেকে আসা একটি মামলার বাদী সৈয়দ আলমসহ আরো অনেকে বলেন, এখন চৈত্র মাস। দিনের বেলায় ব্যাপক গরম পড়তে শুরু করেছে। আদালতের আশপাশের ছায়াবৃক্ষ ছাড়া কোথাও আশ্রয় নেওয়ার বিকল্প নেই। এ মুহুর্তে আদালতের আশপাশে অবস্থিত গাছ কেটে ফেলা হলে আমাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবেনা।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামসুন নাহার সুমি সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা পরিষদ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে চার পাশের বড় আকারের গাছগুলো বিধি মোতাবেক নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদ ভবনটি রক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়। ওই কমিটি গাছগুলো পর্যবেক্ষণ করে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গাছের মূল্য নির্ধারণ করে নিলামে বিক্রি করা করা হয়।

এদিকে লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, পরিষদের আশপাশে দু-একটি ভেঙ্গে পড়া গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কতগুলো গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের গাছ কাটার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে নিলাম কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: জুয়েল মজুমদারকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের আইনজীবি মো: মামুন মিয়া। নোটিশে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ব্যাখা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি ডা: জুয়েল মজুমদার নিশ্চিত করেছেন।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী বলেন, সরকারী যে কোন গাছ কাটতে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। এক্ষেত্রে লামা উপজেলা পরিষদ বনবিভাগ কর্তৃক গাছ কাটার কোন অনুমতি নেয়নি। 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন