parbattanews

‘মহাসেন’: ১০ জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত

Cox-Pic-5

ডেস্ক নিউজ 

ঢাকা: চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরের জন্য ৭ নাম্বার বিপদ সংকেত দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।  আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বুলেটিনে বলা হয়েছে, সাত নাম্বার বিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে উপকূলের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা. বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলা। বিশেষ করে এসব জেলার উপকূলবর্তী এলাকা ও চর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত ১০ নম্বর পর্যন্ত সতর্ক সঙ্কেত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এদিকে মংলা সমুদ্র বন্দরের জন্য ৫ নাম্বার সংকেত দেয়ায় এর আওতায় রয়েছে পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার উপকূলবর্তী ও চর এলাকাসমূহ।

আবহাওয়ার সবশেষ বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন বুধবার সকাল নয়টায় পশ্চিম মধ্য এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে কিছুটা উত্তর এবং উত্তর পশ্চিমে অগ্রসর হয়েছে। যেটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮৭৫ কিলোমিটার  দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার  দক্ষিণ পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে।

এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে এগিয়ে আসতে পারে এবং এটি  বৃহস্পতিবার ভোরে  পটুয়াখালীর খেপুপাড়া, কক্সবাজারের টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। বর্তমানে বাতাসের গতিবেগ ৫৪ কিলোমিটার যা ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. এএমএম আমানত উল্লাহ খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন,  “কত নম্বর সঙ্কেতে কি হয়, তা জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারবেন। এতে ঝুঁকিও কমে যাবে।”

প্রতি বছর এই সময়ে দেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা দেখা দেয়। সমুদ্র বন্দরের জন্য আবহাওয়ার সঙ্কেতগুলো হচ্ছে- ১ নম্বর দূরবর্তী সঙ্কেত, ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত, ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত, ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত ও ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত। তবে ৮, ৯ ও ১০ নম্বর হলো মহাবিপদ সঙ্কেত।

উপকূল থেকে দূরে গভীর সাগরে ঝড় হলে ও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো বিপজ্জনক সময় না হলে চারটি (১-৪) সঙ্কেত ব্যবহার করা হয়। তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথে বিপদে পড়ার শঙ্কা থাকে।

৪ থেকে ৭ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত মানে বন্দর ছোট ও মাঝারি সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত হতে পারে। ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার।

৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের সময় মাঝারি তীব্রতা সম্পন্ন সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় মাঝারি ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও নদীতে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।

৮ থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও নদীতে মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে। ৮ থেকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণার পর প্রচার মাধ্যমে প্রতি ৫ মিনিট পর পর প্রচার করতে হবে। ৮ নম্বর সঙ্কেতে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিমি, যা প্রচণ্ড তীব্রতা সম্পন্ন সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়।

৯ নম্বর সঙ্কেতে  ১১৮ থেকে ১৭০ বেগে হারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড় বিরাজ করবে। সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দর এলাকা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অতি তীব্র ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে।

১০ নম্বর সঙ্কেতের সময় অতি প্রচণ্ড তীব্রতা বিশিষ্ট বা সুপার সাইক্লোনের তীব্রতা বিশিষ্ট প্রচণ্ডতম সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দর এলাকায় অতীব তীব্র ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭১ কিলোমিটার বা তার বেশি হবে।

২০০৭ সালের সিডরসহ কয়েকটি বড় ঘূর্ণিঝড়ের সময় ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছিল বলে জানান আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ।

৮, ৯ ও ১০ নম্বর সঙ্কেতের সময় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ দালান কোঠায় অনতিবিলম্বে জনসাধারণকে স্থানান্তর করতে হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাসমূহকে পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুত থাকতে হবে এবং ইমারজেন্সি অপারেশন কেন্দ্রের সর্বশেষ নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

এর বাইরে ১১ নম্বর হলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সঙ্কেত। আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আয়েশা খাতুন জানান, ঝড়ের মাত্রা এতো বেশি হয়, যখন আবহাওয়ার বিপদ সঙ্কেত দেওয়া কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

১ নম্বরে সামুদ্রিক ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিমি, ২ নম্বরে ৬২ থেকে ৮৮ কিমি এবং ৩ নম্বরে নদী ও সমুদ্র বন্দর এবং আশেপাশের এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিমি। ৩ নম্বরের বেলায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও নদীতে চলাচলকারী ৬৫ ফুটের নিচে নৌকাযানগুলোকে অতি সত্ত্বর নিরাপদে আসতে বলা হয়। ১ ও ২ নম্বর সঙ্কেতে বন্দরত্যাগী জাহাজ পথে ঝড়ের মধ্যে পতিত হতে পারে, সেজন্য তাদের উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে বন্দরকে কেন্দ্র করে সঙ্কেতগুলো তৈরি হয়েছে। এছাড়া নদী বন্দরের জন্য চারটি (১-৪) সঙ্কেত রয়েছে।

ড. আমানত উল্লাহ খান আরও বলেন, “ঘূর্ণিঝড় নিয়ে জনগণের মধ্যে কনফিউশন তৈরি না হলে বড় দুর্যোগ মোকাবেলা কঠিন হবে না। সেজন্য প্রয়োজন সতর্ক সঙ্কেত জেনে আগাম প্রস্তুতি।”

Exit mobile version