“বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত ধলঘাটা ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের লাখো মানুষ।”

মহেশখালীতে জোয়ারের পানি ঢুকে ২ ইউনিয়নে ১৫ গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার উপকূলীয় দ্বীপ মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে আজ শনিবার (৪এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।

ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে অনন্ত ১৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত ধলঘাটা ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের লাখো মানুষ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে গত শুক্রবার স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই-তিন ফুট পানি বেড়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ বাড়ার পাশাপাশি জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। এতে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর রাজঘাটে ১০০ মিটার, পশ্চিমে ষাইটপাড়ায় ২০০ মিটার নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।

ধলঘাট ইউনিয়নের হামিদখালী থেকে সরইতলা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার ও ভারতঘোনার ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এ কারণে ধলঘাটা ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে প্রায় ১৫ গ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ধলঘাট ইউনিয়নের হামিদখালী থেকে সরইতলা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে দক্ষিণ সরইতলা ও ভারতঘোনার অন্ত্যত ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ। এতে ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে উত্তর সুতুরিয়া, দক্ষিণ সুতুরিয়া, কিছরাবন্যা, বনজামিরা, পানিরছড়া, সিকদারপাড়া, সাপমারার ডেইল, পন্ডিতে ডেইল, মুহুরিঘোনা, নাছির মোহাম্মদ ডেইল ও সরইতলা গ্রামে।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাইরার ডেইল বাইরের পাড়া, পশ্চিম ষাইটপাড়া, নয়াপাড়া ও উত্তর রাজঘাটে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবন হয়েছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে সাইরার ডেইলের পশ্চিমে নোঙর করা চারটি ফিশিং বোট ডুবে গেছে। জোয়ারের পানি ঢুকে মাতারবাড়ীর প্রায় ২৫০ ঘরবাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

ইউপির চেয়ারম্যান আরো বলেন, জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে চার গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পশ্চিম ষাইটপাড়ার ভাঙা বাঁধ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার না করলে পুরো এলাকা সাগরে তলিয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ধলঘাট ইউনিয়নের সরইতলার বাসিন্দা রফিক ও নুরুল আমিন বলেন, সকালে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে রিং বাঁধটি সম্পূর্ণ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এ কারণে জোয়ারের পানি ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকে সরইতলাসহ ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

মাতারবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম ষাইটপাড়ার বাসিন্দা জাফর আলম বলেন, ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে লোকালয়ে প্লাবিন হয়েছে। আর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অন্তত ২০০ ঘরবাড়ি।

ধলঘাট ইউপির চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে শনিবার জোয়ারের পানি ঢুকে অন্তত ১০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভাঙা বাঁধের কারণে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে এই এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ধলঘাট ও মাতারবাড়ীতে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বেশ কয়েকটি গ্রামে প্লাবিন হয়েছে বলে শুনেছি। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা সরেজমিনে ঘুরে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘আজ সকালে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধলঘাট ও মাতারবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে শুনেছি। অচিরেই ভাঙা বাঁধে জিওব্যাগ বসিয়ে অন্তত বর্ষার মৌসুমে জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

পাউবোর চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলা করার জন্য আমি নিজেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে চার দিন ধরে মাঠে কাজ করছি। উপকূলীয় এলাকা ঘুরে বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা দেখেছি। যেখানে বাঁধের অবস্থা একটু খারাপ, সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে শ্রমিক নিয়োগ করে মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে।’

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাঁধের বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি দাবি করে মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, যেখানে বেড়িবাঁধ ভাঙবে, সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে জিওব্যাগ বসানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ১৫ গ্রাম প্লাবিত, ২ ইউনিয়নে, মহেশখালীতে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন