“মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা দিয়েছে বন অধিদপ্তর। পৃষ্টপোষকতা করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃপক্ষ।”

মহেশখালীতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘বর্জ্য দিন, ইফতার নিন’

fec-image

সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরীতে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ শুরু করেছে। সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিকের বিনিময়ে নিত্যপণ্য পাচ্ছে স্থানীয়রা আর সোনাদিয়ায় মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন দ্বীপবাসিকে ইফতার সামগ্রি দিয়েছে বলে জেনেছি। উদ্যোগগুলো অভিনব।

দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর পশ্চিমপাড়া ঝাউবীথির ছায়ায় বসে আছে একঝাঁক শিশু-কিশোর। সবার হাতে ময়লার বস্তা। চেয়ে আছে সমুদ্রপানে। অপলক দৃষ্টিতে। কী যেন চাওয়া! অনেক আগ্রহ তাদের।

জিজ্ঞেস করলে সবার একই জবাব, চাওয়া-ইফতারি। কারা যেন বলেছে, ‘ময়লার জমা দিলে ইফতারি পাবে!’ তাই দীর্ঘ অপেক্ষা। সকাল থেকেই বসে আছে।

কিছুক্ষণ পরে দেখা গেলো, কয়েকজন ব্যক্তি বস্তাভর্তি মুড়ি আর খেজুরের প্যাকেটসহ হাজির। ইতোমধ্যে লাইন ধরে আছে সোনাদ্বীপের পূর্বপাড়া ও পশ্চিম পাড়ার কয়েকশ মানুষ। বৃদ্ধ-নারীরাও লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ), দুপুর প্রায় বারোটা। রমজানের প্রথম রোজার আগের দিন এমন ঘটনার অবতারনা ঘটালো মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন।

এ সময় আয়োজক সংস্থা মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সবার হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় ইফতারি। বিনিময়ে তারা গ্রহণ করলো বাসাবাড়ি কিংবা ঘরের আঙিনা থেকে কুড়িয়ে নেওয়া ময়লা-আবর্জনার বস্তাগুলো।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন, স্থানীয় মেম্বার একরাম মিয়া ও মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের মহেশখালী প্রতিনিধি একেএম হাসানুজ্জামান মৃদুলসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

অপেক্ষা কষ্টের হলেও ইফতারির প্যাকেট পেয়ে বেশ খুশি দ্বীপাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত বাসিন্দারা। তারা আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে।

মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা দিয়েছে বন অধিদপ্তর। পৃষ্টপোষকতা করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) কর্তৃপক্ষ।

প্রশাসন ও মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দ্বীপ ও বসতবাড়িকে আবর্জনা মুক্ত করতে সহায়তা করবে, এমনটি মন্তব্য কুতুবজোম ইউনিয়নের দ্বীপ এলাকার মেম্বার একরাম মিয়ার।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর সহকারী ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, সোনাদিয়া একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় দ্বীপ। এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ কারণে দ্বীপকে পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপকূলীয় বনবিভাগ ও বেজার সহযোগিতায় এ উদ্যোগে রয়েছে ইফতার ও ঈদ সামগ্রি বিতরণ।

দ্বীপবাসীর বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকপণ্য ও অন্যান্য আবর্জনা এক্সচেঞ্জ করলেই ইফতার ও ঈদ সামগ্রি পাবেন তারা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সেন্টমারটিনসহ অন্যান্য দ্বীপ এবং সৈকতকে দূষনমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে পুরোপুরি সফলতা আসছে না। সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরীতে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ শুরু করেছে। সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিকের বিনিময়ে নিত্যপণ্য পাচ্ছে স্থানীয়রা আর সোনাদিয়ায় মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন দ্বীপবাসিকে ইফতার সামগ্রি দিয়েছে বলে জেনেছি। উদ্যোগগুলো অভিনব। আশা করছি এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা হবে।

উল্লেখ্য, মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন সৃষ্টিশীল কর্মের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সুবিধা বঞ্চিতদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে তারা নানা ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইফতার, উদ্যোগ, দিন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন