মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু, মহেশখালীর সাড়ে ১৪ হাজার জেলের জন্য ৮০৯ টন চাল বরাদ্দ

fec-image

দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশ বিস্তারে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে আজ ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার দিনক্ষণ শুরু হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপকূলের হাজার হাজার জেলে। মহেশখালী উপজেলার সাড়ে ১৪ হাজার জেলের জন্য সরকার ৮০৯ টন চাল বরাদ্ধ দিয়েছে। এতে প্রতি জেলে পাবেন ৫৬ কেজি করে চাল। আগামী ২২ মে থেকে উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে এই চাল বিতরণ শুরু করবে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ তদারকী করবে উপজেলা মৎস্য অফিসার।

মহেশখালী উপজেলা মৎস্য অফিসার আবদুর রহমান খান বলেন, আগের পুরাতন তালিকায় ছিলো ১১ হাজার ৪৪২ জন, এবারে নতুন ভাবে যাচাই বাচাই করে আরো ৩ হাজার জেলেকে নথিভুক্ত করে নিবন্ধন করা হয়েছে মোট ১৪,৪৪২ জন জেলে পাবে সরকারী এই সহায়তা।

উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোমে ৪১৯৬ জন, পৌরসভা ২৫৯২ জন, মাতারবাড়ী ১৭৫৮জন, ছোট মহেশখালী ১১৮১জন, ধলঘাটা ১০১১ জন, হোয়ানক ১১৮১জন, বড় মহেশখালী ৯৬৯জন, শাপলাপুর ৮০০ জন , কালারমারছড়ায় ৭৫৪ জন জেলে পাবে ৫৬ কেজি করে চাল। এটি প্রথম পর্যায়ের বরাদ্ধ ২য় পর্যায়ে আরো ৩০ কেজি করে চাল পাবেন জেলেরা।

জেলেরা বলছেন, এমনিতেই করোনাকালে তাঁদের রোজগারে টান পড়েছে। তার ওপর সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কীভাবে পরিবার চলবে, এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন তাঁরা। নিষেধাজ্ঞা চলকালে জেলেরা খাদ্যসহায়তা হিসেবে চাল পান। চালের পাশাপাশি তাঁদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ৬৫ দিন দরকার আছে কি না, তা বৈজ্ঞানিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত। কারণ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ১৫ এপ্রিল থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত। দেশে এই সময়সীমা ১ মে থেকে ৩০ জুন করা হলে তা বেশি কার্যকর হতে পারে।

মহেশখালী উপকুলের মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার দাবি করে আসছি। গরিব জেলেরা সাগরে নামতে না পারলে খাবেন কী? তাই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে অনেক জেলে জেল-জরিমানার ভয় উপেক্ষা করেন। তবে বেশির ভাগ জেলে ও ট্রলারমালিক আইন মেনে সাগরে যান না।

মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ২০১৫ সালে এই নিষেধাজ্ঞা চালু হয়। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার এর আওতায় থাকলেও ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, সরকার এই নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের খাদ্যসহায়তা দেয়। এরই মধ্যে জেলেদের জন্য ১৬ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় উপকূলের ১৪টি জেলার ৬৬টি উপজেলায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৫টি জেলে পরিবার ৫৬ কেজি করে চাল পাবে এর মধ্যে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় উপজেলার মহেশখালীর জেলেদের জন্য ৮০৯ টন চাল বরাদ্ধ দিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় যে চাল দেওয়া হয়, তাতে এক মাসেরও খোড়াক হয় না।

কুতুবজোম ঘটিভাঙ্গার জেলে রফিক বলেন, একটা গ্রামে ৫০০ জেলে থাকলে চাল পান ১০০ জন। যাঁরা পান, তাঁদের আবার ওজনে কম দেওয়া হয়। জেলে নন, এমন লোকেরাও চাল পান। জনপ্রতিনিধিসহ অনেকে জেলেদের চালে ভাগ বসান বলে অভিযোগ করেন এই জেলে।

এদিকে নিষেধাজ্ঞার দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কক্সবাজার উপকূলের জেলেদের। উপজেলার কুতুবজোমের দক্ষিন পাড়ার জেলে নুরুল আলমের কথায় এর আভাস পাওয়া গেল।

আলম বললেন, ‘করোনায় আমদের মেরুদন্ড ভাইঙা গেছে। করোনার পর ২২ দিনের ইলিশের অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা), ৮ মাসের জাটকা ধরার অবরোধ। এখন গাঙ্গে-সাগরেও তেমন মাছ-পোনা নাই। এখন আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ক্যামনে যে বউ-বাচ্চা লইয়্যা বাঁচমু, কিছু খইতে পারি না!’

এমন উদ্বেগের কথা জানালেন পৌরসভার চরপাড়ার জেলে আলাউদ্দিন তিনি বললেন, ‘নিষেধাজ্ঞায় নিষেধাজ্ঞায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। গত সরকারি সহায়তা বলতে ৫৬ কেজি চাউল পাইছিলাম। চাউল দিয়া কি খালি খিদা মেটে, বলেন?’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন