parbattanews

মাটিরাঙার গৃহহীন পারুল ও ওবায়দুল হক পাচ্ছে সরকারি পাকা ঘর

বছর তিনেক আগে ঝড়-বৃষ্টিতে উড়ে গেছে ঘরের ছালা। ঘরের ছালা উড়ে গেলেও এখনো ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে চারপাশের মাটির দেয়াল। তবে ইতোমধ্যে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে মাটির দেয়ালও। সেই থেকে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রিত হয়ে আছেন চার সন্তানের জনক কর্মক্ষমহীন মো. ওবায়দুল হক। অন্যদিকে আট বছর আগে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে চলে গেছে পারুল বেগমের স্বামী। অন্যের বাড়িতে কাজ করেই চলে দুই সন্তানসহ নিজের ভরণ পোষন। অভাব অনটনকে সঙ্গী করেই দুই সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ির রান্না ঘরে ঠিকানা হয়েছে স্বামী পরিত্যাক্তা ভূমিহীন পারুল বেগমের।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের দৈন্যদশার খবর প্রকাশের পর বিষয়ের সত্যতা জানতে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সরেজমিনে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তঘেঁষা তবলছড়ির হাজীপাড়ায় ছুটে যান মানিবক কর্মকতা মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা) মিজ ফারজানা আক্তার ববি।

এসময় অসহায় দুই পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা) মিজ ফারজানা আক্তার ববি। তাদের দীর্ঘদিনের দুর্দশা লাঘব ও নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে পাকা ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গৃহহীণ হওয়ার পর থেকেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন চার সন্তানের জনক মো. ওবায়দুল হক। অন্যের সাহায্যেই চলে শারীরিকভাবে কর্মক্ষমহীন ওবায়দুল হকের পরিবার। সহযোগিতা না পেলে উপোস থাকেন। ইতিমধ্যে স্ত্রীও পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। চার সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে দিলেও অন্য তিন সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে দিনাতিপাত করেন তিনি।

জানতে চাইলে মো. ওবায়দুল হক বলেন, একসময় কাজ করে সংসার চালালেও এখন আর কাজ করার শক্তি নেই। চোখে কম দেখি আর কানেও খুব ভালো করে শুনতে পাইনা। আমাদের মতো গরীবের খবর কেউ রাখেনা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার ঘরের ছালা উড়ে গেলেও গেল তিন বছরেও কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। ভিটেমাটি থাকলেও নিজের বাড়িতে, নিজের ঘরে আমি মরতে পারবো না।

অন্যদিকে আট বছর আগে স্বামী চলে যাওয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন পারুল বেগম। সারাদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও রাতে সন্তানদের নিয়ে মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই ছিলনা। তখনই তার আশ্রয় হয় তবলছড়ির হাজীপাড়ায় বাপের বাড়ির একটি কুঁড়ে ঘরে। এখানেও খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে আর একটি ছেলে সহ পারুল বেগমের। সরকারি সহায়তা তার কাছে এখনো সোনার হরিণ।

পাকার ঘর করে দেয়ার ঘোষনায় খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গৃহহীন ও স্বামী পরিত্যাক্তা পারুল বেগম বলেন, আমার দুর্দশার কথা যখন কেউ শোনেনি তখন জেলা প্রশাসক শুনেই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা আমার জীবনে বড় পাওয়া।

এদিকে গৃহহীণ মো. ওবায়দুল হক ও পারুল বেগমকে পাকা ঘর করে দেয়ার খবরে সীমান্তঘেঁষা তবলছড়ির সচেতন মহল খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এবিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা) মিজ ফারজানা আক্তার ববি জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর এখানেও গৃহহীনদের খুঁজে খুঁজে বের করে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ির মানবিক জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিদের্শে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের দূরবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই তারা পাকা ঘরে তাদের মাথা গোঁজার ঠিকানা হবে।

Exit mobile version