মাটিরাঙ্গার ইট ভাটাগুলোতে লাখ লাখ মন কাঠ পোড়ানোর প্রস্তুতি চলছে : একদশকেও গড়ে উঠেনি পরিবেশবান্ধব ইটভাটা

 photo

মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি, পার্বত্যনিউজ :

প্রশাসনের নাকের ডগায় দেশের প্রচলিত আইন-কানুনকে উপেক্ষা করে, পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে নতুন নতুন ইট ভাটায় পাহাড়ী বনাঞ্চলের বৃক্ষরাজি ধ্বংস করে লক্ষ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানোর প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে পার্বত্য খাগড়াছড়ির জনবহুল মাটিরাঙ্গাতে। পাহাড় কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই পাহাড়ের মাটি দিয়েই তৈরী হচ্ছে ইট। ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে উজাড় হচ্ছে মুল্যবান বনজ সম্পদ। ইটভাটা তৈরীর কোন আইনই যেন মানছেনা ইটভাটার মালিকরা। অজ্ঞাত কারণেই নীরব স্থানীয় প্রশাসন।

ইটভাটাগুলোতে জ্বালানী কাঠ ব্যাবহারে সরকারী বিধিনিষেধ থাকলেও এখানকার তথাকথিত রাঘব-বোয়ালদের কাছে এসব আইন যেন শুধুমাত্র কাগুজে। উজাড় হচ্ছে পাহাড়ের বিশাল বনভুমি আর বিপর্যয়ের মখে গিয়ে দাড়িয়েছে এখানকার পরিবেশ। অন্যদিকে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজ জমি। নষ্ট হচ্ছে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ২৫ ভাগ বনভুমি থাকার কথা থাকলেও নির্রিচারে বনভুমি উজাড় করে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে তা ১০ ভাগেরও নীচে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এমনটাই আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী মহল ও সচেতন মানুষ।

দীর্ঘ একদশকের বেশী সময় পরেও মাটিরাঙ্গায় গড়ে উঠেনি পরিবেশবান্ধব কোন ইটভাটা। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে ইটভাটাগুলোতে ১২০ফুট ফিক্সড চিমনি তৈরী না করে ড্রাম চিমনি ব্যাবহার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিবেশ আইনে উপজেলা সদরের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকলেও এখানে এ আইন কাগজেই সীমাবদ্ধ আছে। আবাসিক এলাকা, হাটবাজার, ফলের বাগান ও ফসলি জমির আশে-পাশে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাটিরাঙ্গাতে সে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে চলেছে সংশ্লিষ্টরা। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব ইটভাটাকে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটায় রূপান্তরের সময় সীমা বেঁধে দেয়। সেই সময়ের মধ্যে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা তৈরি করা না হলে সে সব মালিকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু সরকারী নিষেধাজ্ঞা যেন মাটিরাঙ্গার ইটভাটা মালিকদের কাছে একটি কাগুজে নিয়ম। তাই তারা বীরদর্পেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের লাইসেন্সবিহীন এসকল ইটভাটা। যেখানে নিয়মের কোন বালাই নেই। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইটভাটাগুলোর প্রতিটিতে বছরে প্রায় ৫০/৬০হাজার মন কাঠ পুড়ছে। সে হিসাবে মাটিরাঙ্গায় বছরে প্রায় দশ লক্ষ মন জ্বালানী কাঠ পুড়ছে। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা হতে ৭ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত আলুটিলা বটতলীর “মিনি পর্যটন কেন্দ্র” ও সেখানে অবস্থিত একটি জুনিয়র হাই স্কুল ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে দুটি ইটভাটা। ইট তৈরী ও কাঠ পোড়ানোর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সেখানেও। ফলে এখানকার নির্মল পরিবেশ হুমকির মুখে পতিত হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন বনাঞ্চল উজার করে ইটভাটায় সরবরাহ করার জন্য কাঠ কাটার কাজও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। জ্বালানী কাঠ ব্যাবহারে সরকারী বিধিনিষেধ থাকলেও মাটিরাঙ্গায় তথাকথিত রাঘব-বোয়ালরা সেসব মানছেন না। ফলে উজাড় হচ্ছে পাহাড়ের বিশাল বনভুমি আর বিপর্যয়ের মুখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এখানকার পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা।

এছাড়াও ইটভাটাগুলো এখানকার বিভিন্ন উপজাতীয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অর্থের অন্যতম উৎস বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। ইটভাটাগুলো থেকে তারা মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে থাকে। আর ইটভাটাগুলো হতে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে তাদের রাষ্ট্রবিরোধী নানা কর্মকান্ডে। যা অনেকটা ওপেনসিক্রেট।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন