মাটিরাঙ্গার গুমতিতে ৯ বাঙ্গালী বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা

30

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতিতে গত এক মাসে নয় বাঙ্গালী বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার গভীর রাতে গুমতির বান্দরছড়া এলাকায়। এর আগে একই গ্রামের মোটা অঙ্কের চাঁদার দাবীতে বান্দরছড়া গ্রামের নয় বাঙ্গালী বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে সন্ত্রাসীরা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গতকাল বুধবার গভীর রাতে বান্দরছড়ার শিশু মিয়া যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখনই ইউপিডিএফের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে প্রবেশ করে গোয়াল ঘরে অগ্নি সংযোগ করে। এতে তার পালিত দুটি গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে পুড়ে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা অন্যান্য ঘরে স্পর্শ করার আগেই স্থানীয়দের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। এসময় গরু বাচাতে গিয়ে আহত হন শিশু মিয়া। এর আগেই গত দুই মাস পুর্বে সন্ত্রাসীরা একই কায়দায় শিশু মিয়ার বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করে সন্ত্রাসীরা।

ঘটনার ২৪ ঘন্টা পেরুলেও এখনও কোন জনপ্রতিনিধি তার খবর নেয়নি অভিযোগ করে শিশু মিয়া বলেন, এর আগে আমার ঘর পুড়ে দিলে বিজিবির সহায়তায় আমি আবারও ঘর করেছি। তিনি বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন এর বাড়ি গোমতি হলেও তিনি একবারও আমার বা আমাদের কোন খবর নেননি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো: জয়নাল আবেদীন জানান, গত দুই মাসে ব্যবধানে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা এর আগেও একই এলাকার আবদুল জলিল, মো: জাকির মিয়া, নমির হোসেন, আবদুল করিমসহ নয় বাঙ্গালীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে করে বাঙ্গালীরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বাঙ্গালীরা রাতভর পালাক্রমে পাহারা দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গোমতিতে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা বাঙ্গালী বাড়িতে একের পর এক অগ্নিসংযোগ, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, বাগান কেটে ফেলা, বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন চললেও কেউই বাঙ্গালীদের কোন খবর নেয়না। উল্টো বাঙ্গালীদের উপর দায় চাপিয়ে বাঙ্গালীদেরকেই দায়ী করা হচ্ছে।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ মে ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি পঞ্চসেন ত্রিপুরাকে হত্যার পর থেকেই ইউপিডিএফ কৃষি নির্ভর গোমতি ইউনিয়নে তাদের একক আধিপত্য বিস্তারে মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ গোমতির ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের কাছে চিঠি দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। দাবী কৃত চাঁদা না পেয়ে ইউপিডিএফের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দুই দফা গোমতি বাজারে হামলা ও লুটপাট করে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিজিবির হস্তক্ষেপ ও স্থানীয় বাঙ্গালীদের ঐক্যের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠলেও তারা পদ্ধতি পরিবর্তন করে বাঙ্গালীদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করে।

এর আগেও গত বছরের ১৮ অক্টোবর ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো: মনির হোসেনকে চিঠি দেয় ইউপিডিএফের মাটিরাঙ্গা ইউনিট সংগঠন। নির্ধারিত সময় বেধে দিলেও তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তার সৃজিত বাগানের প্রায় দুই হাজারেরও বেশী বিভিন্ন প্রজাতির কলাগাছ কেটে ফেলে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন