parbattanews

মাটিরাঙ্গার ঘটনায় এতিম হয়ে গেলো আনিছা, আমেনা আর মায়া

সকালে রুটি রুজির জন্য বড় ছেলে আকবর আলীকে সাথে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল সাহাব মিয়া। তার কিছুক্ষণ পরেই বের হয় ছোট ছেলে আহাম্মদ আলী। কথা ছিল প্রতিদিনের মতোই দুপুরে বাড়ি ফিরে এক সাথে খাবার খাবে। কিন্তু বুলেটের আঘাতে মুহুর্তের মধ্যেই ঝাঁজড়া হয়ে গেল দুই ছেলেসহ সাহাব মিয়ার প্রাণ।

মুহুর্তের মধ্যেই এলোমেলো হয়ে গেল একটি পরিবারের স্বপ্ন। দুই কিশোরী বধুর বেঁচে থাকার সব অবলম্বন।

সাহাব মিয়া ও তার তার দুই ছেলের মৃত্যুর পর অমানিশার ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে পরিবারটির উপর। শুধু তাই নয়, চিরদিনের জন্য বাবার আদর বঞ্চিত হলো আহাম্মদ আলীর পাঁচ মাস বয়সী শিশু কন্যা আনিছা এবং আকবর আলীর দুই কন্যা আমেনা ও মায়া।

বাবাসহ দুই ছেলের মৃত্যুতে বাড়িতে যখন স্বজনদের কান্নার রোল তখন বাড়ির উঠানে অন্যদের দিকে নির্বাক তাকিয়ে আছে আকবর আলীর পাঁচ বছর বয়সী কন্যা আমেনা। আর মায়েদের কোলে জরোসরো হয়ে শুয়ে আছে আনিছা ও মায়া।

বাবা বলে ডাকার সুযোগই পায়নি নিষ্পাপ আনিছা ও মায়া। তার আগেই এতিম হলো এক বছর বয়সী মায়া আর পাঁচ মাস বয়সী আনিছা। মুখে ভাষা ফোটার আগেই পিতাকে হারানো এ শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত তাদের স্বজনরা।

এদিকে অসময়ে স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ আহমেদ আলীর স্ত্রী ও নিহত মফিজ মিয়ার মেয়ে রুমা আক্তার শোকে কাতর হয়ে গেছে।

রুমা আক্তার বলেন, একই সাথে স্বামী, বাবা, শ্বশুর ও ভাসুরকে হারিয়েছি। এতো বড় ক্ষতি আমার কেন হলো? আমার একমাত্র মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে ৫ মাস। সে এখনো বাবাকে ডাকতে শিখেনি। বড়ো হয়ে সে কাকে বাবা বলে ডাকবে ? আমি এ শিশু সন্তানকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো?

অন্যদিকে স্বামীকে হারিয়ে শিশু কন্যা মায়াকে কোলে নিয়ে অঝড়ে কাঁদছেন আকবর আলীর স্ত্রী আকলিমা আকতার। অপরদিকে নির্বাক হয়ে বসে আছে আকবর আলীর পাঁচ বছর বয়সী কন্যা আমেনা।

তিনি বলেন, স্বামী, শশুর আর দেবরকে হারিয়ে আমরা অভিভাবকহীন হয়ে গেলাম। আমাদের মাথার উপর থেকে ছাতা সরে গেছে। আমরা কোথায় কি দাঁড়াবো..? কোন অপরাধে আনিছা, আমেনা আর মায়া বাবার আদর বঞ্চিত হলো…?

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) জনৈক চান মিয়ার বাগানের চার টুকরা কাঠাল গাছ পরিবহনকালে মাটিরাঙ্গার গাজিনগরে বিজিবি বাঁধা প্রদান করে। একসময় গাছগুলো বিজিবি নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে যেতে চাইলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার  একপর্যায়ে বিজিবি এলোপাথারী গুলি করে।

এসময় ঘটনাস্থলেও মারা যান মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি মো. সাহাব মিয়া প্রকাশ মুছা মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন খান, সাহাব মিয়ার আরেক ছেলে আহাম্মদ আলী, মো. মফিজ মিয়া এবং তার ছেলে মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান সাহাব মিয়ার ছেলে আহাম্মদ আলী ও বিজিবি সদস্য শাওন খান।

এদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আহাম্মদ আলীর শ্বশুর মো. মফিজ মিয়া। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মো. মফিজ মিয়ার ছেলে মো. হানিফ মিয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

Exit mobile version