মাটিরাঙ্গার দুর্গম পাহাড়ী গ্রামে শিক্ষা লাভের দুয়ার খুলে দিল সেনাবাহিনী

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আনোয়ারুল ইসলাম পিএসসি বলেছেন, পাহাড়ের দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যাবস্থার অপ্রতুলতা ও জনসচেতনতার অভাবে পাহাড়ের জনগণের শিক্ষা লাভের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আছে উল্লেখ করে বলেন, পিছিয়ে পড়া জনসাধারনের মাঝে জ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা পৌছে দিতে মাটিরাঙ্গা সেনা জোন সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। বিজয়ের মাসে নতুন বিদ্যালয় এখানকার মানুষের জন্য অনেক বড় পাওয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর এদেশের মানুষ বিজয় অর্জন করে এর একদিন পর চার পাহাড়ী গ্রামের মানুষ পেল শিক্ষা লাভের সুযোগ। যা তাদের জন্য আরেকটি বিজয়। আজ মঙ্গলবার সকালে মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের অর্থায়নে নির্মিত স্থানীয় পাহাড়ী জনগোষ্ঠির স্বপ্নের ‘মাইরুংপাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়‘র পূন:নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেণারেল মো: আনোয়ারুল ইসলাম পিএসসি এ কথা বলেন।

গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার হরিপদ্ম ত্রিপুরা‘র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মাটিরাঙ্গা জোনের বিদায়ী অধিনায়ক লে. কর্ণেল ওমর সাদী, নবাগত জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইয়াছির জাহান হোসেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামসছুল হক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী ও মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিরনজয় ত্রিপুরা প্রমুখ।

বেলা পৌনে এগারটার গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আনোয়ারুল ইসলাম পিএসসি দিকে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে অনুষ্ঠানস্থল মাইরুংপাড়া পৌছলে ছোট্ট একটি শিশু তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় । এসময় স্থানীয়রা উপজাতীয় রীতি অনুযায়ী অতিথিদের উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান অতিথি ফিতা কেটে বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। পরে প্রধান অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেণারেল মো: আনোয়ারুল ইসলাম পিএসসি বিদ্যালয়ের ৯৬ শিক্ষার্থীর হাতে মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপকরণ তুলে দেন। এসময় মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামছুল হক বিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র প্রদানের ঘোষনা প্রদান করেন। বিদ্যালয়টি সরকারী করনের জন্য সর্বাত্বক সহায়তার আশ্বাস দেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম। অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার পাড়া কার্বারীসহ চার পাহাড়ী গ্রামের বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের চোখে-মুখে ছিল স্বপ্ন পুরণের হাতছনি। তারা যেন জীবনে অনেক বড় কোন স্বপ্ন তাদের হাতের মুঠোয় পেয়েছেন এ উচ্ছাসে সবাই উচ্ছসিত।

উল্লেখ্য, মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন দুর্গম কাঠাল বাগান, মাইরুংপাড়া, ধলিয়াপাড়া আর নতুনপাড়া চার পাহাড়ী গ্রামে মোট বসতী প্রায় আড়াই‘শ পরিবারের। কিন্তু সেখানে স্বাধীনতার ৪২ বছর পেরুলেও গড়ে ওঠেনি কোন জ্ঞান ভিত্তিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুর্গম পাহাড়ী জনপদ ধরে ৫ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর বা প্রায় আট কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে গুইমারার বাইল্যাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই একমাত্র ভরসা। এতোকিছুর পর মাটিরাঙ্গার চার পাহাড়ী গ্রামের শিক্ষা লাভের সব সুযোগ যখন বন্ধ তখন স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে মাইরুংপাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু বেশীদুর এগুতে পারেনি স্থানীয়দের এ উদ্যোগ। গত বছরের ঝড়-তুফানে ভেঙ্গে পড়ে স্থানীয়দের গড়া শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বন্ধ হয়ে যায়ে পাঠদান কার্যক্রম। হতাশ হয়ে পড়ে স্থানীয় চার গ্রামের নিরীহ পাহাড়ীরা।

গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার হরিপদ্ম ত্রিপুরা বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও যখন কোন সাড়া পায়নি তখন হাল ছেড়ে না পাওয়ার আশা নিয়ে দারস্থ হয় মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের। বিষয়টি অবহিত করেন মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল ওমর সাদী-কে। তিনি সরেজমিনে বিদ্যালয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই করে এর পুণ:নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

২০১৩খ্রি. সালের ১ জুন বিদ্যালয়ের নির্মান কাজ শুরু করে শেষ হয় একই বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে। সেখানে নির্মিত হয় চার কক্ষ বিশিষ্ট আধাপাকা টিনশেড বিদ্যালয়। তৈরী করা হয় খেলার মাঠও। বিশুদ্ধ পানির সংস্থানে স্থাপন করা হয় একটি টিউবওয়েলও।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন