মুজিবুর রহমান ভুইয়া :
পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের বুক চীরে প্রবাহিত ‘ধলিয়া খাল’র পূর্ব পাশে মোহাম্মদপুরসহ পাঁচ গ্রামের ছয় সহস্্রাধিক মানুষ বর্ষাকালে কার্যত গৃহবন্দি ! স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও খালের পূর্ব পাড়ের জনসাধারণের পারাপারে ব্রীজ বা সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয়নি কেউই। ফলে ওই অঞ্চলের স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ বর্ষাকালে হাঁট-বাজার কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারে না। এ নিয়ে দু’দশকেও পূরণ হয়নি জনপ্রতিনিধিদের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদপুর, বড়ঝলাসহ পাঁচ গ্রামের ছয় সহস্্রাধিক লোকজন উপজেলা সদরে যাতায়াত, হাঁটবাজার, চিকিৎসা এবং স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে মাটিরাঙ্গা হাসপাতাল সড়কটিই একমাত্র ভরসা। উক্ত সড়কের ধলিয়া খালের ওপর কোন সেতু বা ব্রীজ না থাকায় ওই এলাকার ছয় সহস্্রাধিক লোকজন বর্ষাকালে চরম দূর্ভোগে পোহাতে হয়। কেননা ওই এলাকায় কোন বাজার বা স্কুল নেই। ফলে স্কুল-কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা বর্ষাকালে সাঁতরিয়ে খাল পাড় হয়ে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা সম্ভব হয় না।
মাটিরাঙ্গা সেনা জোন কর্তৃপক্ষ ঐ এলাকার হাজার হাজার অধিবাসীর নিয়মিত দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দুই বছর আগে খালের উপর লোহার রড দিয়ে একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে দিলেও সাম্প্রতিক টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে তা পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। ফলে পাঁচ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগে নতুনমাত্রা যুক্ত হয়েছে।
খালটির বাস্তব অবস্থা ও জনদূর্ভোগ সরেজমিনে দেখতে সম্প্রতি খালের পাড়ে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয়রা বুক সমান পানি দিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বাজারে আসছে। আর শিক্ষার্থীরা বই, খাতা মাথায় নিয়ে খাল পাড় হচ্ছে। এ সময় কথা হয়, মোহাম্মদপুর ও বড়ঝলা গ্রাম থেকে আসা দুই শিক্ষার্থী আনজুমান আকতার ও সাগর সেন এর সাথে।
তারা জানায় এ সড়কের ৫টি গ্রামের কয়েক‘শ শিক্ষার্থীরা বর্ষাকালে স্কুলে আসতে পারে না। শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত পোষাক সাথে নিয়ে খাল পাড়ি দিতে হয় এমন অভিযোগ করে কেউ কেউ বলেন, প্রতিদিন এভাবে স্কুলে আসা-যাওয়া কষ্টকর! কেউ আমাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করেনি। ফলে আমরা বছরের পর বছর এভাবেই যাতায়াত করছি।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মো: খলিলুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ধলিয়া খালের পূর্বপাশে কোন জন-মানব বসবাস করছে বলেই কেউ মনে করে না! কোন জনপ্রতিনিধি এসে খোঁজ খবর নিতে আমরা দেখি না। খালের ওপর সাঁকো না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বর্ষাকালে নষ্ট হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা এ সময়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারে না।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শ্রমিক মো: আবদুল আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রবল বর্ষায় আমরা খাল পাড়ি দিয়ে বাজারে যেতে পারিনা বলে কাজ করতে পারিনা। তাই আমাদের ভাগ্যে ভাতও জোটেনা। আমরা পরিবারের অন্যদের নিয়ে এসময় অনাহারে-অর্ধাহারে দির কাটাতে হয়। তার উপর রয়েছে সাপ্তাহিক কিস্তির জ্বালা।
এ প্রসঙ্গে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে একটি সাঁকো করে দিয়েছি। একসময় সেখানে সেনা জোনের পক্ষ থেকেও রডের ঝুলন্ত সেতু করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্ষাকালে পানির স্রোতে সাঁকো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে বিধায় এখানে একটি ব্রীজ নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রকল্প জমা দিয়েছি।
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে ব্রীজ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে চলতি অর্থ-বছরে ব্রীজটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি। এবং এ ব্যাপারে তার পক্ষ থেকে সবধরনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।