মাটিরাঙ্গার ফায়ার সার্ভিসকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করার দাবি

fec-image

খাগড়াছ‌ড়ির ৯‌টি উপ‌জেলার ম‌ধ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থে‌কে সর্ববৃহৎ উপ‌জেলা মা‌টিরাঙ্গা। দিন যত যা‌চ্ছে ততই বাড়ছে দোকান ও বাড়ি ঘরের সংখ্যা। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি চা‌হিদার যোগান। তারম‌ধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অন্যতম।

মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে প্রায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। দূরত্বের ও সংকুলনতার কারণে সময়মতো আগুন নিয়ন্ত্রনে ব্যার্থ হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। পুড়ে ক্ষতি হয় কোটি টাকা। তাই চা‌হিদা অনুযায়ী মাটিরাঙ্গা উপজেলার ৩য় শ্রেণীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করা একই সা‌থে অত্র উপজেলায় আরও একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

তাই মাটিরাঙ্গার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কে ২য় শ্রেণী‌/বি‌গ্রেডে উন্নত করার দাবি জানিয়েছে, স্থানীয় জনসাধারণ সহ জনপ্রতিনিধিরা। দাবিটি দীর্ঘ দিনের হলেও কোন উদ্যেগ নেয়া হয় নি। ফলে এ উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের শঙ্কা বাড়ছে।

বর্তমানে ১৩ জন জনবলসহ ২০১১ সালে স্থাপিত একটি ‘সি’ শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস র‌য়ে‌ছে ,যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া জরুরী দুর্যোগ মোকাবেলায় এক স্টেশনের জনবল ও গাড়ি দিয়ে অন্য স্টেশন কাজ চালাতে হচ্ছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারী মাটিরাঙ্গা থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দুরে আমতলী ইউনিয়নের রামশিরা মসজিদ মার্কেটে আগুন লাগে। মাটিরাঙ্গা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ১টি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ১১টি দোকান পুড়ে ছাঁই হয়ে যায়। ক্ষতি হয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। যা আজও নির্মাণ করা সম্ভব হয় নি।

মাটিরাঙ্গার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি মর্যাদায় তৃতীয় শ্রেণির হলেও মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা দুটি উপজেলার দু‌র্যোগ মোকা‌বেলার দায়িত্ব পালন করতে হয়। একটি মাত্র পানিবাহী গাড়ি কোনো উপজেলায় আগুন নেভানোর কাজে গেলে অন্য উপজেলা সম্পূর্ণ অরক্ষিত থাকে। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে দুর্ঘটনা কবলিতদের উদ্ধারের কোন সরঞ্জাম মাটিরাঙ্গা ফায়ার স্টেশনের কাছে নেই। দুর্ঘটনাস্থল থেকে মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্যও নেই কোনো অ্যাম্বুলেন্স।

উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজারের দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,বসতবাড়ি ও গুরুত্বপুর্ন স্থাপনাসমুহ আগুনের চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

মাটিরাঙ্গা পৌর সদরে অবস্থিত একটি বড় বাজার কিন্তুু আগুন লাগলে তা নেভানোর জন্য ধলিয়া খালের পানিই একমাত্র ভরসা তাই ধলিয়া লেক থেকে পানি উত্তোলনের লক্ষ্যে একটি সিড়ি নির্মাণ করতে মাটিরাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপনা করা হলে সভায় সিঁড়ি নির্মানের করার প্রস্তাব টি গৃহিত হয়।

মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যাবসায়ী পরিচালনা পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. কামরুল হাসান বলেন, মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যাবসায়ীদের পক্ষ থেকে আরও একটি ফায়ার সার্ভিস স্থাপনসহ বর্তমান ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করার জোর দাবি জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৬নং কাউন্সিলর মো. সোহাগ বলেন, মাটিরাঙ্গায় প্রায় ২হাজার ৫শত দোকান রয়েছে। যদি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তাহলে একটিমাত্র ফায়ার সার্ভিস দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব হবে না। তাই মাটিরাঙ্গায় আরো একটি ফায়ার সার্ভিস স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এবং জেলা প্রশাসকের প্রতি দাবি জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. সামছুল হক বলেন, মাটিরাঙ্গা সর্ববৃহৎ উপজেলা একটিমাত্র ফায়ার স্টেশন দিয়ে এত বড় উপজেলায় দুর্যোগ মোকাবিলা করা কখনই সম্ভব নয়। তাই অত্র উপজেলায় স্থাপিত ফায়ার সার্ভিসটি ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করা একই সাথে বৃহৎ সার্থে আরও একটি ফায়ার স্টেশনের দাবি জানান তিনি।

দুই উপজেলার জন্য একটি মাত্র ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তাও আবার তৃতীয় শ্রেণির এটা খুবই দুঃখজনক মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে তানাক্কা পাড়া প্রায় ৪৬ কিলোমিটার। এত বড় উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির একটি মাত্র ফায়ার সার্ভিস স্টেশন দিয়ে পুরো উপজেলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবলছড়ি একটি পুলিশ ফাঁড়ি সহ আরেকটি জনবহুল এলাকা তাই ওই এলাকায় একটি ফায়ার সার্ভিস স্থাপন করলে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে জনগণ রক্ষা পেতে পারে। তাছাড়া মাটিরাঙ্গায় আরো একটি ফায়ার স্টেশন স্থাপন করতে আমরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা ফায়ার স্টেশনকে পর্যাপ্ত লোকবল ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংযোজন করে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হলে প্রতিবছর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে উপজেলাবাসীকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন