মাটিরাঙ্গায় করোনা যুদ্ধে ‘আটজন’

fec-image

চীনের উহান শহর থেকে শুরু হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। বিশ্বব্যাপী মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিয়েছে বাংলাদেশেও। মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সারাদেশে সাধারণ ছুটির সাথে চলছে অঘোষিত লকডাউন। সাধারণ ছুটিতেও মাটিরাঙ্গায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ মাটিরাঙ্গার মানুষকে নিরাপদ রাখতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন ‘ওরা আটজন’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় পৌরসভা এবং ইউনিয়ন কমিটির সাথে সমন্বয় সাধনের জন্য মাটিরাঙ্গায় উপজেলা প্রশাসনের আট কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। গেল ২২ মার্চ মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ স্বাক্ষরিত পত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সরকারি ত্রাণ বিতরণ ও বিদেশ ফেরত লোকজনের তথ্য সংগ্রহ পুর্বক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের আট কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় মাটিরাঙ্গা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আশরাফ উদ্দিন, মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার এসএম রুবাইয়াত তানিম, বেলছড়ি ইউনিয়নে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান, আমতলী ইউনিয়নে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর পাটোয়ারী, বড়নাল ইউনিয়নে উপজেলা রিসোর্স ইনস্ট্রাক্টর মো. আজগর হোসেন, তবলছড়ি ইউনিয়নে উপজেলা সমবায় অফিসার মো. আমান উল্যাহ খান ও তাইন্দক ইউনিয়নে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর মো. মোহতাছিম বিল্লাহ।

নিজের পরিবার পরিজনকে দুরে রেখে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের এসব কর্মকর্তারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন মাটিরাঙ্গার মানুষকে নিরাপদ রাখতে। মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সরকারি ত্রাণ বিতরণ, মানবিক সহায়তার তারিকা যাচাই, টিসিবির পন্য বিক্রি তদারকি ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এসব কাজ করতে গিয়ে তারা নিজেরাই করোনাভাইরাসে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন নিজেকে। তবুও পিছু হটেননি এসব কর্মকর্তারা। সময়ের সাথে সাথে রক্তপাতহীন এক লড়াইয়ে তারা  হয়ে উঠেছেন করোনা যোদ্ধা।

ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ক্যাডার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দিনে দিনে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। সবার মধ্যেই করোনার ভয় রয়েছে। তবুও দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করছি। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এভাবেই বলেছেন তবলছড়ি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা সমবায় অফিসার মো. আমান উল্যাহ খান।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ’র নির্দেশনা মেনে কাজ করছেন জানিয়ে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার মাটিরাঙ্গা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘দেখেন আমাদেরও পরিবার আছে, আছে স্ত্রী সন্তান। তারপরও তাদের মায়া ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে আছি। করোনা মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার কথা জানালেন এ কর্মকর্তা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বরেন, গত দুই মাস ধরে এসব কর্মকর্তা নিজের পরিজন থেকে দুরে আছেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও তারা মাটিরাঙ্গার মানুষকে নিরাপদ রাখতে কাজ করছেন। তারা কখনো সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত  করছেন, তারাই আবার রাতের আঁধারে মধ্যবিত্তদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। সরকারি ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করতে তারা গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে চলছেন। আমাদের সব প্রচেষ্টা তখনই স্বার্থক হবে যখন মাটিরাঙ্গার মানুষ নিরাপদ থাকবে। করোনামুক্ত থাকবে আমাদের মাটিরাঙ্গা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন