parbattanews

মাটিরাঙ্গায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব : পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

02.09.2014_Matiranga Pahar Kata NEWS Pic

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে বসত বাড়ি নির্মানের নামে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। ফলে সবুজ পাহাড়ে পরিবেশ ক্রমেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে বৈচিত্রময় জীব-জন্তুর নিরাপদ স্থানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। হারিয়ে যেতে বসছে মাটিরাঙ্গা বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য।

অপরিকল্পিত ভাবে পাহাড় কাটার ফলে যেকোন ধরনের ভূমি ধ্বসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে বে-আইনি পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে হুমকির মুখে পড়বে এখানকার সবুজ অরণ্য।

নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের অধিকারী মাটিরাঙ্গা উপজেলায় পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা ও ভূমিদস্যুরা। তারা দিন-রাত সমানভাবে পাহাড় কেটে দেদারছে মাটি বিক্রি করছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসন কাউকেই যেন তোয়াক্কা করছে না তারা। এলাকাবাসী বলেছেন, পাহাড় ও টিলাগুলো দ্রুত রক্ষায় এগিয়ে না আসলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে এখানে। অব্যাহত পাহাড় কাটার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাটিরাঙ্গার বেশ কয়েকজন সচেতন নাগরিক শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখানে পাহাড়-টিলা কেটে যেভাবে সাবাড় করা হচ্ছে তাতে কি বিপর্যয় অপেক্ষা করছে কে জানে।”

এখানে যেসব পাহাড় ও টিলা রয়েছে সেগুলোতে প্রচুর আম, কাঁঠাল, কলা, তেজপাতা উৎপাদন হয় এবং এগুলো দেশ-বিদেশে চাহিদাও পুরণ হয়ে আসছে। এখনই পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে বিশাল ফল সম্ভারও নষ্ট আর অর্থনৈতিক চাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলা সদরের মিস্ত্রিপাড়ায় ঘুরে দেখা গেছে বিনা বাধায় পাহাড় কাটার দৃশ্য। স্থানীয় মো: আবদুল হক সু-পরিকল্পিতভাবে লাব্রেচাই মারমা নামক এক ব্যাক্তির পাহাড় কেটে নিজে বাড়ি তৈরী করেছেন। বর্তমানে পাহাড়টি ঝুকির মধ্যে রয়েছে। অব্যাহত পাহাড় কাটার ফলে ভারী বর্ষনে পাহাড়টি ধ্বসে পড়ে স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়েছে গেছে।

একই ভাবে উপজেলার উপজেলার পূর্বখেদাছড়ার সাবেক মেম্বার স্থানীয় প্রভাবশালী মো: ফরিদ মিয়া কোম্পানী পাহাড় কাটছেন কোন ধরনের বাঁধা ছাড়াই। এর আগেও একই ব্যাক্তি পাহাড় কাটা কালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি সাময়িক ভাবে পাহাড় কাটা বন্ধ করে দেন। সম্প্রতি আবারও শুরু করেছেন পাহাড় কাটা। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুমি অফিসের লোকজনের পরামর্শ মতেই পাহাড়টি কাটছেন তিনি।

অন্যদিকে উপজেলা বেলছড়ি ইউনিয়নের জনৈক ইলিয়াছ মোল্লা‘র ভোগ-দখলীয় পাহাড় কেটে লেকের পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মো: জয়নাল মোল্লা। এবিষয়ে ন্যায় বিচারের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহলে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ ইলিয়াস মোল্লা। ভারী বর্ষনে যেকোন সময় তার পাহাড়টি ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

এছাড়াও মাটিরাঙ্গা দারুচ্ছুন্নাহ মাদরাসার বড় একটি পাহাড় কেটে দেদারছে মাটি বিক্রি করছে সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে উপজেলার বেলছড়ি, গোমতি, আমতলী, বড়নাল ও তবলছড়ির বিভিন্ন স্থানে চলছে পাহাড় কাটা। কোথাও কোথাও চলছে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির মহোৎসব।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলী ফিরোজ বলেন, অবৈধ পাহাড় কাটার পাশাপাশি এসব টিলাতে অপরিকল্পিতভাবে আদা, হলুদ, কচু ও শিমুল আলু (কাসাবা) চাষ করায় মাটির ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। পাহাড়ের খাড়া অংশে মাটি কেটে এসব ফসল উৎপাদন করায় ঝরঝরে মাটি সহজেই ধসে পড়ছে। এ ছাড়া, ভূমিকম্প ও পাহাড়ের বনজঙ্গল কেটে উজাড় করায় মাত্রাতিরিক্ত ভূমিধস হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি সম্ভাব্য পাহাড় ধ্বস ঠেকাতে পাহাড় কাটা বন্ধের পাশাপাশি ব্যাপক বনায়ন করা প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) অনুযায়ী পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্ত্বেও এখানে পরিবেশ আইনের কোন প্রয়োগই চোখে পড়ছেনা। ফলে অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটা যেন থামছেনা বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটা বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে অবহিত করা হলে অজ্ঞাত কারনে কোন ব্যবস্তা নেয়নি প্রশাসন।

এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্মসম্পাদক মো: আলাউদ্দিন লিটন বলেন, পাহাড় কাটা পরিবেশ আইনে সর্ম্পূণভাবে নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্বেও মাটিরাঙ্গা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার খবর শুনেছি। তিনি পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী বলেও মনে করেন। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এবিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউল বলেন, বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার বিষয়টি শুনেছি। শীঘ্রই এ বিষয়ে সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 

Exit mobile version