parbattanews

মাটিরাঙ্গায় জনপ্রিয় হচ্ছে তাইওয়ানের ‘রেডলেডি পেঁপে’

আঁকা বাঁকা মেঠোপথের চারদিক যেন ঘন সবুজ ডেউ তোলা পাহাড়। যে দিকে তাকাই শুধু সবুজের সমারোহ। পাহাড় জুড়ে রাস্তার দু‘পাশে সারি সারি পেঁপে গাছ। আর সেবসব গাছে ঝুলছে বিভিন্ন আকারে উন্নত জাতের পেঁপে। যেতে যেতে দুর থেকেই কাঠ দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন একটি কটেজ চোখে পড়বে। সেই কটেজের সামনে কয়েকজন শ্রমিক বাগানে উৎপাদিত রেডলেডি জাতের পেঁপে পেকেটজাত করছেন। বলছিলাম খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে দুরে দুর্গম পাহাড়ি জনপদ রসুলপুরে গড়ে ওঠা ‘তরুছায়া এগ্রো ফার্মের’ কথা।

সেখানেই প্রায় চার বছর আগে ‘তরুছায়া এগ্রো ফার্ম’ নামে একটি কৃষি খামার প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. শাহেদ আয়াত উল্যাহ খান। পোল্ট্রি ফার্ম দিয়ে শুরু করা ‘তরুছায়া এগ্রো ফার্ম’ ইতিমধ্যে কৃষি বান্ধব মিশ্র ফলের বাগানে পরিণত করেছেন এ উদ্যোক্তা। রেডলেডি জাতের পেঁপে’ চাষে সাফল্যের বীজ বুনেছেন কৃষিবান্ধব মো. শাহেদ আয়াত উল্যাহ খান।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে এক বছর আগে দশ একর পরিত্যাক্ত পাহাড়ি টিলা ভুমিতে চকরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বীজ সংগ্রহ করে ছয় হাজারেরও বেশি ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপের চারা রোপন করেন ‘তরুছায়া এগ্রো ফার্ম’র কর্ণধার মো. শাহেদ আয়াত উল্যাহ খান। প্রায় ১০ একর পাহাড়ি ভূমিতে গড়ে তুলেছেন রেডলেডি জাতের পেঁপে বাগান।

স্বল্প মেয়াদি রেডলেডি পেঁপে চাষের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী উন্নত জাতের কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, আম ও বড়ই চাষ করেছেন ‘তরুছায়া এগ্রো ফার্মে।

পাহাড়ি টিলা ভুমিতে সবুজে মোড়ানো ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে বাগান। সাড়ি সাড়ি পেঁপে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন আকারের পেঁপে। সেখানেই কথা হয় তরুছায়া এগ্রো ফার্মের স্বপ্নদ্রষ্টা মো. শাহেদ আয়াত উল্যাহ খান‘র সাথে।

বাগানের পেঁপে গাছের চারা রোপনের সময় সামান্য পরিমান রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলেও এখন সম্পুর্ন জৈব সারই ব্যবহার হয়ে থাকে পেঁপে বাগানে। ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক এমনটা জানিয়ে মো. শাহেদ আয়াত উল্যাহ খান বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ফেনীর পাইকারী বাজারে জায়গা করে নিয়েছে রেডলেডি পেপে। চলতি বছর ৪০/৫০ টনেরও বেশী পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন জানিয়ে তিনি পেঁপে চাষে সাফল্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তার মতে পাহাড়ের অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে।

জানা গেছে, তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির এ পেঁপে চারা রোপনের ৫-৬ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং ৭-৯ মাসের মধ্যে প্রথম ফল পাওয়া যায়। লাল-সবুজ রঙের প্রতিটি পেঁপের ওজন হয় দেড় থেকে দুই কেজি। খেতে সুমিষ্ট এ পেঁপে সুগন্ধিযুক্ত। কাঁচা ও পাকা উভয় প্রক্রিয়াতেই বাজারজাত করা যায়। পাকা পেঁপে খুব সহজে নষ্ট হয়না বলে বাজারজাত করা সহজ। এ জাতের পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য করার সক্ষমতা রয়েছে। ‘রেডলেডি’ জাতের পেঁপে গাছের আয়ুকাল দুই বছরের অধিক।

মাটিরাঙ্গার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে এ জাতের পেঁপে সম্ভাবনাময় জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা রেডলেডি পেপে চাষে এগিয়ে এসছেন। অনেকে কাঙ্খিত সাফল্যও পেয়েছেন। পরিকল্পিত বাগান সৃষ্টিসহ সঠিক পরিচর্চা করা পেলে এ জাতের পেঁপে পাহাড়ে কৃষকের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। পাহাড়ের মাটির উর্বরতা ও অনুকুল আবহাওয়ার রেডলেডি জাতের পেঁপে চাষের জন্য সহায়ক বলেও জানান তিনি। শুধুমাত্র ছত্রাকের আক্রমন ছাড়া অন্য কোন রোগবালাই হয়না।

Exit mobile version