মাটিরাঙ্গায় ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার

fec-image

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ডা. সিফাত হাসান শাহিন নামের এক ভুয়া চিকিৎসককে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপরের দিকে ওই চেম্বারে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট  ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ২৯ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট।

আটক সিফাত হাসান শাহিন কদমতলী ঢাকার দনিয়া এলাকার ১৩৮৯, সওদাগর বাড়ির মো. জজ মিয়ার ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে ডাক্তার পরিচয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন সিফাত হাসান শাহিন।

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশী সময় ধরে নিজেকে এমবিবিএস (ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন) ও সিসিডি (বারডেম) মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সম্মুখে জমিলা ফার্মেসীতে চেম্বার করে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন তিনি। দীর্ঘ প্রতারণার পর চিকিৎসকদের হাতেই ধরা খেলেন বিসিএস-এফসিপিএস ডিগ্রীধারী এ ভুয়া চিকিৎসক।

জানা যায়, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে জমিলা ফার্মেসীর চেম্বারে ডা. সিফাত হাসান শাহিনের সাথে কথা বলেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তরুণ চিকিৎসক ডা. এমরান হোসেন, ডা. নাহিদা আকতার ও ডা. শরীফুল ইসলাম। আলোচনায় তার আচরণ ও কথাবার্তায় সন্দেহ হয় এসব তরুণ চিকিৎসেকর।

তারা রাতভর তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের পর তাকে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করার পর শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালের দিকে দ্বিতীয়বারের মতো জমিলা ফার্মেসীর চেম্বারে আসেন। এসময় তারা তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান। তিনি নিজেকে ভুয়া এমবিবিএস, বিসিএস ও এফসিপিএস ডিগ্রীধারী দাবি করে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার অনুরোধ করেন।

সিফাত হাসান শাহিন ১৯৯৩ সালে এসএসসি ও ১৯৯৫ সালে এইচএসসি পাস করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র উল্লেখিত জন্ম তারিখ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৭ মার্চ ১৯৯৪খ্রি.। তিনি জনৈক ডা. দিলরুবা আকতারের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার-৩৯২৬৬ নিজের দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে আসছেন।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সিফাত হাসান শাহিন তার প্রেসক্রিপসন প্যাড ও ভিজিটিং কার্ডে নামের পাশে এমবিবিএস (ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন) ও সিসিডি (বারডেম) ছাড়াও নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

২০১২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন দাবি করলেও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে চিকিৎসক হিসেবে তার এমবিবিএস ডাক্তারি সনদ ও বিএমডিসি কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখতে চাইলে তিনি সেগুলো দেখাতে পারেননি।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, অভিযানকালে সিফাত হাসান শাহিন কোনো বৈধ সনদ দেখাতে পারে নি। তিনি ভ্রাম্যমান আদালতের কাছে নিজেকে ভুয়া ডাক্তার হিসেবে স্বীকার করেছে। তাই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ২৯ ধারায় ভূয়া পদবী নাম ব্যবহারের অপরাধে তাকে একবছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

অভিযানকালে সহযোগিতা করেন বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা: ময়নাল হোসেন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ওমর ফারুক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. এমরান হোসেন, ডা. নাহিদা আকতার ও ডা. শরীফুল ইসলাম ও মাটিরাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশিদ আলম।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ডাক্তার, ডেন্টাল, ভ্রাম্যমান আদালত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন