মাটিরাঙ্গায় মামলাজটে আটকে থাকা গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারীদের মাঝে রেশন বিতরণ

21.04.2014_Matiranga-NEWS-Pic-650x462
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
অবশেষে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন ২৪টি গুচ্ছগ্রামের মধ্যে মামলাজটে আটকে থাকা ৭টি গুচ্ছগ্রামের রেশনকার্ডধারীদের মধ্যে রেশন বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি‘র উপস্থিতিতে মুশলধারে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই কার্ডধারীরা সংশ্লিষ্ট গুদাম থেকে তাদের রেশন গ্রহণ করেছেন।

দীর্ঘদিন পরে আটকে থাকা নয় মাসের বকেয়া রেশন পেয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছে কার্ডধারীরা। এ যেন ভাঙ্গা ঘরে চাঁদের হাসি। স্থগিত থাকা নয় মাসের বকেয়া রেশন পাওয়ায় সেনাবাহিনী-বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারী।

গুচ্ছগ্রামগুলোর প্রকল্প চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে সাবেক প্রকল্প চেয়ারম্যানদের দায়ের করার রীটের কারণে মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ের নোয়াপাড়া গুচ্ছগ্রাম, সাহেব সর্দারপাড়া গ্রচ্ছগ্রাম, তবলছড়ির বড়বিল গ্রচ্ছগ্রাম, গুইমারার গুইমারা মুসলিমপাড়া-২ গ্রচ্ছগ্রাম, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মাটিরাঙ্গা নিশা-২ গ্রচ্ছগ্রাম, ধলিয়া গ্রচ্ছগ্রাম ও আলুটিলা গ্রচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তখন স্থানীয় রাজিৈনতক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এসব গুচ্ছগ্রামে রেশন বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

গৃহিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৩টি গ্রচ্ছগ্রামসহ অন্যান্য গুচ্ছগ্রামে রেশন বিতরণ শুরু হয়। মাটিরাঙ্গা পৌরসভাধীন গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারীরা আগ্রহের সাথেই তাদের প্রাপ্য রেশন তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। একইভাবে অপর চারটি গুচ্ছগ্রামে বিজিবি‘র জওয়ানদের উপস্থিতিতে রেশন বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।

সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে আলুটিলা গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারী মো: নুরু মিয়া বলেন, সেনাবাহিনী ছিল বলেই আমরা আমাদের প্রাপ্য অধিকার নিয়ে ঘরে ফিরছি। দীর্ঘদিন রেশন না পেয়ে এতোদিন ভোগান্তির শিকার হয়েছে সাধারণ কার্ডধারীরা। তিনি আগামীতেও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণ নিশ্চিত করার আহবান জানান।

আলুটিলা গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারী মো: ইমরান হোসেন বলেন, জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত রেশন কার্ড প্রকল্প চেয়ারম্যানের কাছে আটকে রাখার যে নিয়ম এতোদিন চলে আসছিলো সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে জনগণ তাদের রেশন কার্ডগুলো বুঝে পাচ্ছে। তিনি সেনাবাহিনী-বিজিবি‘র উপস্থিতিতে রেশন বিতরণকে আওয়ামীলীগ সরকারের বড় অর্জন দাবী করে করে সেনাবাহিনী-বিজিবি‘র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মাটিরাঙ্গার ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের রেশন কার্ডধারী মো: আবদুল মালেক বলেন, দীর্ঘদিন আটকে থাকা রেশন পেয়ে আজ আমরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছি। তিনি সামনের দিনগুলোতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণের দাবী করে বলেন, সেনাবাহিনী ছিল বলেই আমরা আমাদের অধিকার বুঝে পেয়েছি। রেশন বিতরণে কোন ধরনের ‘গোজামিল’ বা ‘নয়-ছয়’ ছিলনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণেই রেশন বিতরণে স্বচ্ছতা ছিল।

সাধারণ রেশন কার্ডধারীরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সেনাবাহিনী জনগণের পাশে ছিল বলেই জনগনের তাদিরে প্রাপ্য অধিকার পেয়েছে। সেনাবাহিনী না থাকলে তথাকথিত রাঘববোয়ালদের পকেটে চলে যেত জনগণের সম্পত্তি। সেনাবাহিনী-বিজিবি‘র উপস্থিতি ছাড়া শতভাগ রেশন বিতরণ সম্ভব নয় দাবী করে তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত রেশন মারিং-কাটিং করে ‘বড় লোকের খাতায় নাম লিখিয়েছে’ কতিপয় জনপ্রতিনিধি। তবে রেশন বিতরণে এখনো কোন কোন গুচ্ছগ্রামে ‘নয়-ছয়’ হচ্ছে দাবী করে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণ নিশ্চিত করার দাবী জানান তারা।

প্রসঙ্গত, হাইকোর্টে দায়ের করা রীটের কারনে দীর্ঘদিন রেশন বিতরণ বন্ধ থাকার পর চলতি মাসের শুরুতে মাটিরাঙ্গার ৭টি বাদে ১৭টি অ-উপজাতিয় গ্রচ্ছগ্রামের রেশনের ডিও প্রদান করা হয়। অবশেষে মামলাজটে আটকা থাকা ৭টি গুচ্ছগ্রামের ২ হাজার ৪‘শ ৪ জন কার্ডধারী পরিবার সেনাবাহিনী ও বিজিবি‘র উপস্থিতিতে স্থগিত নয় মাসের রেশন নিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন