parbattanews

মাটিরাঙ্গায় সাহাব মিয়া’র পরিবারে শোকের মাতম

মাত্র একদিন আগেও যাদের পড়নে ছিল লাল পাড়ের রঙিন শাড়ি. মুখে ছিল হাসি আর চোখে ছিল উচ্ছ্বাস। যারা বাড়ি জুড়ে ছুটে বেড়াতো। সে বাড়িতেই মাত্র একদিনের ব্যবধানে বউ শাশুড়ির পড়নে লাল পাড়ের রঙিন শাড়ির বদলে উঠেছে সাদা শুভ্র শাড়ি। হাসি লুকিয়েছে কান্নার আড়ালে। চোখ জুড়ে হতাশার ছাপ। সর্বত্রই যেন স্বজন হারানোর বেদনা। একদিন আগে যে বাড়িতে ছিল প্রাণ চাঞ্চল্য সে বাড়িতেই আজ চলছে শোকের মাতম।

ঘটনার একদিন পর বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরের দিকে বিজিবির গুলিতে দুই ছেলেসহ নিহত সাহাব মিয়ার বাড়িতে গেলে এমন দৃশ্যের অবতারনা হয়। মাথার উপর ছায়ার মতো বাবা আর দুই ভাইকে হারিয়ে বিলাপ করছে সাহাব মিয়ার চার মেয়ে মোরশেদা বেগম ,আলেয়া বেগম, জুলেখা বেগম ও নিফুলা বেগম। এসময় তাদের আহাজারিতে শোকের পরিবেশ তৈরি হয়। আর নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে নিহত আকবর আলীর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে আমেনা আক্তার। অন্যদিকে মায়ের কোলে জড়োসরো হয়ে আছে আহাম্মদ আলীর পাঁচ মাস বয়সী শিশু কণ্যা আনিছা ও আকবর আলীর শিশু কণ্যা মায়া।

স্বামী আর দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রঞ্জু বেগম সাংবাদিক পরিচয় জানতেই স্বামী আর সন্তান হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করলেন। বললেন বিজিবি সামনে থেকে গুলি করে তার স্বামী আর দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, স্বামী-ছেলের মৃত্যুর খবর শুনার আগে আমি কেন মরে গেলাম না।

আমি এখন কি অবলম্বন নিয়ে বাঁচবো। আমার দুই অবুঝ বউ‘মার কি হবে। যে বয়সে লাল শাড়ি পড়ে আনন্দ করার কথা সে বয়সে কোন অপরাধে ওদেরকে সাদা শাড়ি পড়তে হলো..? কি হবে আমার নাবালক নাতনীদের..? আমার ভাঙা ঘরে কে আলো জ্বালাবে…? কথাগুলো বলতে গিয়ে বারবারই মুর্চা যাচ্ছিলেন স্বামী-সন্তান হারানো রঞ্জু বেগম।

এসময় সেখানে উপস্থিত স্বজনরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, পরিবারের তিন সদস্য সাহাব মিয়া, আকবর আলী ও আহমদ আলী‘র মুত্যুর পর এ ঘরে আলো জ্বালানোর মতো আর কেউ রইলো না। বাবা ও দুই ছেলের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না স্বজনরা। বাবা সাহাব মিয়া ও দুই ছেরের বউ শাশুড়ির পড়নে কোন অপরাধে লাল শাড়ির বদলে সাদা শাড়ি উঠবে…? তারা এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নিজের বাগানের গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে মাটিরাঙ্গার গাজিনগরে বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। এসময় বিজিবি সদস্যরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাহাব মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী। এসময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মফিজ মিয়া এবং মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান বিজিবি সদস্য শাওন ও আহাম্মদ আলী। এদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান মো. মফিজ মিয়া।

Exit mobile version