parbattanews

মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণ: কার্ডধারীদের সন্তোষ প্রকাশ

 21.04.2014_Matiranga-NEWS-Pic-650x462
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৫টি গুচ্ছগ্রামের মধ্যে দুইটি গুচ্ছগ্রামে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে সাধারণ কার্ডধারীরা। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে রেশনকার্ডধারী মাঝে শতভাগ রেশন বিতরণ নিশ্চিত হওয়ায় রেশনকার্ডধারীরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও মৃদু ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যানরা। তবে এ বিষয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানদের কেউই সংবাদ মাধ্যমের কাছে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইকোর্টে দায়ের করা রীটের কারণে দীর্ঘদিন রেশন বিতরণ বন্ধ থাকার পর চলতি মাসের শুরুতে মাটিরাঙ্গার ৭টি বাদে ১৭টি অ-উপজাতিয় গ্রচ্ছগ্রামের রেশনের ডিও প্রদান করা হয়। দীর্ঘদিন আন্দোলনে থাকা সাধারণ কার্ডধারীরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণের দাবী করে আসছিল। সাধারণ কার্ডদারীদের দাবী অনুযায়ী মাটিরাঙ্গা পৌরসভাধীন দুইটিসহ ১৭টি গুচ্ছগ্রামে সেনাবাহিনী ও বিজিবি‘র উপস্থিতিতে জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের রেশন বিতরণ করা হয়।

সেনাবাহিনী-বিজিবি‘র উপস্থিতিতে রেশন বিতরনের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছে মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামের সাধারণ কার্ডধারীরা। তাদের মতে ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মনোনীত একজন সরকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে রেশন বিতরণ করা হলেও তাতে ছিল ব্যাপক ‘গোজামিল’। অধিকাংশ সময়ই সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাকে গুদামে দেখা যায়নি। সরকারী প্রতিনিধির উপস্থিতিতেও ‘নয়-ছয়’ ছিল রেশন বিতরণে। নানা অজুহাতে প্রত্যেক কার্ডধারীকে ৫/৭ কেজি বা ক্ষেত্র বিশেষে ১০/১২ কেজি কম দেয়ার অভিযোগ ছিল মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু এবার সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণের ব্যবস্থা করায় সাধারণ কার্ডধারীরা তাদের অনুকূলে শতভাগ রেশন পেয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক রেশন কার্ডধারী।

মাটিরাঙ্গা নিশা-১ গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারী আবদুল আলী বলেন, আগে রেশন বিতরণে অনিয়ম থাকলেও এবার সেনাবাহিনী থাকায় কোন অনিয়ম ছিলনা। আমরা আমাদের সব রেশন বুঝে পেয়েছি। তিনি আগামীতেও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে  রেশন বিতরণ নিশ্চিত করার আহবান জানান। একই গুচ্ছগ্রামের মো: নুরুল ইসলাম বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন প্রকল্প চেয়ারম্যানদের কাছে জিম্মি ছিল। বরাদ্দকৃত রেশন ঠিক মতো বিতরণ করা হতোনা। তিনি ভবিষ্যতেও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণ করার দাবী জানিয়ে বলেন, সাধারণ মানুষ এখন আর কারো কাছে জিম্মি থাকতে চায়না।

মাটিরাঙ্গার আলুটিলা গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারী মো: নুরু মিয়া বলেন, জনগণের রেশনের টাকায় ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’ হয়েছেন প্রকল্প চেয়ারম্যানরা। তাই তারা প্রকল্প চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য আদালতেও গিয়েছেন। আর ভোগান্তির শিকার হয়েছে সাধারণ কার্ডধারী। একটি বিশেষ মুহুর্তে জনগণের জীবন রক্ষার্থে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে রেশন কার্ড প্রদান করা হয়েছে দাবী করে তিনি বলেন, জনগণের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকেই ভূমিকা রাখতে হবে।

আলুটিলা গুচ্ছগ্রামের মালেকা বেগম সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে আলুটিলা গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এতোদিন স্থানীয় প্রকল্প চেয়ারম্যান মো: সাইফুল ইসলাম বাবুর কাছে জিম্মি ছিলাম। প্রতি ডিও-তে আমাদেরকে ২০/২৫ কেজি করে কম দেয়া হতো। এজন্য কোন প্রতিবাদও করা যায়নি। তিনি সবসময় সেনাবাহিনীর মাধ্যমে রেশন বিতরণের দাবী জানান।

একই বক্তব্য প্রদান করেছেন আলুটিলা গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারী মো: আলী আশ্রাফ, ফরিদ মিয়া ও হাফিজ মিয়া সহ অনেক কার্ডধারী। তাদের মতে রেশন বিতরণের সময় সেনাবাহিনী না থাকলে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে ঘরে আসতে পারবেনা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা রেশন আদায় সংগ্রাম পরিষদ’র সভাপতি শ্রমিক নেতা মো: হাফেজ পাটোয়ারী‘র সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, জনগণের আন্দোলনের ফলেই অতিলোভী রীটকারীরা তাদের রীট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। আন্দোলনের ফলেই জনগণ তাদের রেশন পেতে শুরু করেছে। তবে সেনা উপস্থিতি ছাড়া শতভাগ রেশন বিতরণ সম্ভব নয় দাবী করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত রেশন মারিং-কাটিং করে ‘বড় লোকের খাতায় নাম লিখিয়েছে’ কতিপয় জনপ্রতিনিধি। তবে তিনি মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বাইরের গুচ্ছগ্রামগুলোতে এখনো নয়-ছয় হচ্ছে দাবী করে সেসব গুচ্ছগ্রামে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে রেশন বিতরণ নিশ্চিত করার দাবী জানান।

Exit mobile version