parbattanews

মাটিরাঙ্গা থেকে পালিয়ে যাওয়া পাহাড়ীরা নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছে: মহাল ছড়িতে ১৪৪ ধারা

মুজিবুর রহমান ভুইয়া, মাটিরাঙ্গা:

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী তাইন্দং-এর বান্দরসিং এলাকা থেকে মো: কামাল হোসেন (৩২) নামে এক বাঙ্গালী যুবককে অপহরণ ও এর জের ধরে বেলা দুইটার দিকে পার্শ্ববর্তী তিনটি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় আতঙ্কিত প্রায় চার শতাধিক পাহাড়ী নানামুখী উদ্যোগ ও দেনদরবারের পর ২৮ ঘন্টা পর আজ রবিবার বিকালে নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরে এসেছে।

এদিকে গত শনিবার মোটর সাইকেল চালক মো. কামাল হোসেনকে অপহরণের পর বাঙ্গালীদের প্রতিবাদের মুখে প্রায় সাড়ে ছ‘ঘন্টা পর সন্ধ্যা পৌণে সাতটার দিকে ছেড়ে দেয়া হলেও আরো বড় ধরনের হামলার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে তাইন্দং এর কয়েকটি গ্রামের বাঙ্গালীরা। নোয়াপাড়া, বাঘমারা, ফংপাড়া, বটতলী ও তানাক্কাপাড়ার বাঙ্গালীরা পালাক্রমে পাহারা দিয়ে রাত কাটিয়েছে। অন্যদিকে বগাপাড়া, সর্বস্বপাড়া ও বান্দরসিং এ তিনটি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া পাহাড়ীরা এখনো নিজ ভুমিতে ফিরে আসেনি। তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে গত শনিবার রাতভর নিষ্ফল চেষ্টা করেছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামছুল হক ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলমসহ প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা।

গত শনিবার রাত বারটার দিকে তাইন্দং এর দুর্গম পাহাড়ী পাহাড়ী পল্লী তালুকদার পাড়ায় বাড়ি-ঘরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। তবে সেখানে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি।

এদিকে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে রবিবার সকালে ঘটনাস্থল তাইন্দং এর বগাপাড়া, সর্বস্বপাড়া, তালুকদার পাড়া ও বান্দরসিং এ ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ী পল্লী সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দিপঙ্কর তালুকদার, চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মো. সাব্বির আহমেদ, গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মো: ইমদাদুল হক পিএসসি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম, পুলিশ সুপার শেখ মো: মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তা ব্যাক্তিরা।

রবিবার বেলা ১২টার দিকে সীমন্তবর্তী ফেনী ছড়া ক্যাম্প এলাকায় যান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দিপঙ্কর তালুকদার, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম ও খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার শেখ মিজানুর রহমানসহ সরকারী পদস্থ কর্মকর্তারা।

পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে তাইন্দং বাজারে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য সকলকে আহবান জানিয়ে বলেছেন, কোন ধরনের গুজবে কান দেবেন না। সম্প্রীতি বজায় রেখে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সকলকে মিলেমিশে বসবাস করতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য কোন পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টা করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার আহবান জানান তিনি। এসময় অন্যান্যের মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামছুল হকসহ রাজনৈতিক ও সরকারী পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রবিবার বেলা সাড়ে এগারটার দিকে বগাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ী পল্লী পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মো: সাব্বির আহমেদ। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি ঘুরে দেখেন। এসময় তার সাথে পদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সর্বশেষ খবর পাওয়া (বিকাল ৬ টা) পর্যন্ত সীমান্তবর্তী ফেনী নদী পার হয়ে নিজ ভুমি ছেড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেয়া পাহাড়ীরা নিজের ভিটেমাটিতে ফিরে এসেছে। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম এ প্রতিনিধিকে তাদের ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
 
মহালছড়িতে ১৪৪ধারা জারি
মাটিরাঙ্গার তাইন্দংএলাকায় বাঙ্গালী মোটর সাইকেল চালককে অপহরণের জের ধরে সৃষ্ট সংঘষের্র প্রতিবাদে জেলার অন্য উপজেলা মহালছড়িতে একই স্থানে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ-বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ সভা ডাকায় ১৪৪ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাহেব চৌধুরী জানান, বাসটার্মিনালে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের দুটি ছাত্র সংগঠনের একই স্থানে সভা ডাকায় আইন শৃংখলার অবনতি যাতে না ঘটে তাই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

Exit mobile version