কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামহুরী নদীর বিএমচর কন্যারকুম পয়েন্টে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি ও আবাদি জমি রক্ষার্থে স্থায়ীভাবে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের কন্যারকুম পয়েন্টে বেড়িবাঁধের উপরে এ মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী বিএমচর ও কোনাখালী ইউনিয়নের সীমানা পয়েন্ট কন্যারকুমে নদী শাসন ও আগামী বর্ষার পূর্বেই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত না হলে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে পড়তে হবে। ফলে নদীর অস্থায়ী বাঁধ ও ভাঙন নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে উপকূলীয় ৭ ইউনিয়নের জনসাধারণ। বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বেই পাথরের ব্লক দিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। অন্যথায় প্রতি বছরের ন্যায় আবারও কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক, বসতঘর, নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে তলিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন।
ইতিমধ্যে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গেল ভয়াবহ বন্যায় ভাঙ্গনকৃত অংশে জিইও ব্যাগ ও তার উপরে মাটি দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধে যে বস্তা ডাম্পিং করা হয়েছে তা খুবই অপ্রতুল বলেও দাবি করেছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে কাজটি তারা শেষ করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতে প্রতি বর্ষা মৌসুমে মাতামুহুরী নদীর কন্যারকুম বেড়িবাঁধ পয়েন্ট ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন জরুরি বরাদ্দের বিপরীতে নয়-ছয় করে কোন রকম মাটির বাঁধ দিয়ে চলে যায়। এভাবে সরকারের অজস্র টাকা নষ্ট হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্টরা অনিয়মের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। তাই এভাবে টাকার অপচয় না করে মাটির বাঁধের পরিবর্তে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে পাথরের ব্লক বসালে উপকূলের ৭ ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে। কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তাই আমরা ত্রাণ চাইনা, চাই স্থায়ী বেড়িবাঁধ।
স্থানীয় বাসিন্দা মাস্টার মোহাম্মদ হোছাইন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পাউবো’র কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মাধ্যমে ডাম্পিং এলাকার জিইও ব্যাগের কাজে চুরি এবং প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটি ভরাট না করে কম ব্যাগ ডাম্পিং করায় ঝুঁকিপূর্ণ এই এলাকাটি আরো আতঙ্কের জন্ম দিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে ফের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলোচ্ছ্বাস হলে উপকূলের দুই লক্ষাধিক মানুষ জানমাল নিয়ে দুর্ভোগে পড়বেন।
আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্যে বিএমচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ইসমাঈল মানিক ও ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, এই ভাঙন অংশে প্রতিবারই লোভ দেখানো বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে দায়সারাভাবে বাঁধ নির্মাণ করে জনগণ কোন ধরনের উপকৃত হচ্ছে না। এলাকার মানুষকে বাঁচাতে প্রয়োজন স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ। জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না আগামী বর্ষা মৌসুমে এতদঞ্চলের মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকার প্রধান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উক্ত মানববন্ধনে স্থানীয় আওযামীলীগ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৃষক দেলোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম, আবু ছালামসহ এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ, শতশত কৃষক ও সর্বস্তরের জনসাধারণ।