মাতামুহুরী রিজার্ভের বাঁশমহাল নিলাম বন্ধ : কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

Alikadam Bemboo News Pic
মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম:
গত দু’বছর ধরে লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রিজার্ভের বাঁশ মহাল নিলাম বন্ধ থাকায় সরকার কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত অর্থ বছরে বাঁশ নিলাম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার পর চলতি অর্থ বছরেও নিলাম প্রদানে অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বাঁশ মহাল নিলাম বন্ধ থাকায় দাখিলার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়পূর্বক বাঁশ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাঁশ ব্যবসায়ী ও বাঁশ নির্ভর শ্রমজীবীরা। এর ফলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আদায় হবে। অন্যদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাঁশ শ্রমিকদের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রেঞ্জের আওতাধীন প্রায় ১ লক্ষ ৩ হাজার একর জায়গা জুড়ে রয়েছে। মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট। পুরো রিজার্ভ ফরেস্ট জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ। প্রতিবছর এ সকল বাঁশ নিলাম করে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করে থাকে। গত ২০১২ – ২০১৩ অর্থবছরে মাতামুহুরী রেঞ্জে বাঁশ মহাল নিলাম থেকে ৬১ লক্ষ ৩৮ হাজার ১৬ টাকা রাজস্ব আদায় হয় বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাঁশমহাল নিলামে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী অনুমতি পেতে দেরী হওয়ায় গত ২০১৩ – ২০১৪ অর্থ বছরে বাঁশ মহালসমূহ নিলাম দেয়া হয়নি। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে বাঁশ মহাল সম্পর্কিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। গঠিত উক্ত কমিটি এখন পর্যন্ত মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশমহাল সমূহ পর্যবেক্ষণ কিংবা এ সংক্রান্ত কোন প্রতিবেদন দাখিল না করার কারণে চলতি ২০১৪ – ২০১৫ অর্থ বছরেও লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রিজার্ভের বাঁশ মহালসমূহ নিলাম প্রদানের অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হয়েছে। পর পর দু’বছর নিলাম বন্ধ থাকলে এ খাত হতে সরকার কম পক্ষে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাঁশ-বেত ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, মাতামুহুরী রেঞ্জের আওতাধীন রিজার্ভ ফরেস্টে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫০ লক্ষ বাঁশ উৎপাদন হয়। বন বিভাগ এলাকা ভিত্তিক বাঁশমহাল নিলাম দিয়ে থাকে। এতে সরকার তুলনামূলক কম রাজস্ব পায়। তার মতে নিলাম না দিয়ে দাখিলার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় পূর্বক বাঁশ সরবরাহের অনুমতি দিলে সরকার লাভবান হবে। পাশাপাশি বাঁশনির্ভর শ্রমিকরা উপকৃত হবে। স্থানীয় বাঁশ ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বলেন, প্রচলিত বাঁশ মহাল নিলামে কঠিন শর্তের কারণে ক্ষুদ্র বাঁশ ব্যবসায়ীরা অংশ নিতে পারে না। এতে গুটিকয়েক ব্যক্তিই লাভবান হয়। নিলাম না দিয়ে দাখিলা (টিপি)’র মাধ্যমে বাঁশ সরবরাহ করে সরকার আরো বেশী রাজস্ব পাবে।

দুর্গম এলাকার বাঁশ শ্রমিক কাইরী মুরুং, ধুংশো মার্মা ও লক্ষিজন ত্রিপুরা বলেন, বিশাল এ বনভূমির আনাছে-কানাছে সুদীর্ঘকাল থেকে বসবাস করছে মুরুং, মার্মা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী। এসব জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙ্গালিরা মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে রুজি-রোজগার করে। বাঁশমহাল নিলামের নামে বাঁশ শ্রমিকরা নিলাম গ্রহীতাদের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে পড়ে। নিলাম না দিয়ে দাখিলার মাধ্যমে বাঁশ সরবরাহ করা হলে সরকারের পাশাপাশি তারাও উপকৃত হবে। এদিকে, বাঁশ মহাল নিলাম বন্ধ থাকলেও থেমে নেই সরকারি বনাঞ্চল থেকে বাঁশ আহরণ। প্রতিদিন চোরাই ভাবে একটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র হাজার হাজার বাঁশ আহরণ করছে। এনিয়ে বন বিভাগও পড়ছে বিপাকে।

এ প্রসঙ্গে লামা সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রায় চৌধূরী অবৈধভাবে কিছু বাঁশ কাটার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, গতবছর প্রায় ৭ লক্ষ বাঁশ জব্দ করা হয়েছিলো।

লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধূরী জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতির কারনে বাঁশ মহাল নিলাম প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। তিনি জানান, সরকারি বনাঞ্চলের বাঁশ দাখিলার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়পূর্বক সরবরাহের অনুমতি নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন