parbattanews

মাতামুুহুরীর গতিপথ পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা

ফাইল ছবি

মাতামুহুরী নদী পার্বত্য চট্টগ্রাম অতিক্রম করে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার পূর্ব দিক দিয়ে পশ্চিম দিকে এসে গতিপথ পরিবর্তন করেছে। প্রায় ৩০/৪০ বছর আগে গতিপথ পরিবর্তনের সূচনা হলেও ১৫/২০ বছরের ব্যবধানে পানির ব্যাপক স্রোত উজানঠিয়া খাল দিয়ে মাতারবাড়ী-মগনামার মধ্যখানে কুতুবদিয়া চ্যানেলে পতিত হচ্ছে। নদীর পানির সাথে ব্যাপক পলি মাটি আসছে। এতে কুতুবদিয়া চ্যানেলে পানির গভীরতা কমে মাতারবাড়ী বহুমুখী প্রকল্প ও মগনামা নৌবাহিনী ঘাঁটিতে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দুঃখের বিষয়, এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গঠনমূলক কোনো বাস্তব প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। জানি না, তাদের অবস্থান কী।

মাতামুহুরী চকরিয়ার পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে এসে বদরখালী উজানঠিয়ার মধ্য দিয়ে সোজা দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। মহেশখালীর পূর্ব পাশ দিয়ে এ নদী কক্সবাজার শহর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। এ নদী দেশকে বহুমাত্রিক কল্যাণ দিয়ে আসছে হাজার বছর ধরে। কক্সবাজার বন্দরও এ নদী দ্বারা উপকৃত। নদীপথ পরিবর্তন হওয়ায় কক্সবাজার শহর সংলগ্ন বাঁকখালী নদীতে এবং বাঁকখালী নদীর মোহনায় ব্যাপক হারে চর জেগে উঠেছে। ফলে কক্সবাজার নদীবন্দর নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন।

এ নদী দিয়ে ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ আমলের প্রথম দিক ১৯৭০-এর দশকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। তখন ছিল মহেশখালীর পূর্ব দিকে যথেষ্ট গভীরতা ও প্রশস্ততা। কিন্তু উজানঠিয়া খালের পূর্বপাশে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী সংলগ্ন এলাকায় চর জাগায় নদীর গতি দক্ষিণ দিক থেকে পশ্চিম দিকে উজানঠিয়া খালের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এ প্রবাহ বছর বছর বাড়ছেই। গত ১০/১৫ বছর যাবৎ তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

মাতামুহুরী নদীর চার ভাগের এক ভাগ পানির ধারণক্ষমতাও উজানঠিয়া খালের নেই। ফলে বর্ষাকালে পানির স্রোতে এ খালের দু’দিক ভাসিয়ে দেয়। পেকুয়া উপজেলার উজানঠিয়া ও করিয়ারদিয়ার হাজার হাজার মানুষ আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকবার উভয় দিকে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উজানঠিয়া খাল দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানির স্রোত মাতারবাড়ীর মগনামার মধ্যখানে দিয়ে কুতুবদিয়ার চ্যানেলে পড়ায় এখানে গভীরতা কমে যাচ্ছে। এখানকার দক্ষিণ সংলগ্ন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ী বহুমুখী প্রকল্পের কাজ চলমান। এ খালের উত্তর দিকে মগনামা নৌবাহিনীর ঘাঁটি। এখানেও কুতুবদিয়া চ্যানেলের গভীরতা কমে গেলে এ নৌবাহিনীর ঘাঁটিতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নোয়াখালী, ভোলাসহ বৃহত্তর বরিশাল, বৃহত্তর খুলনার দক্ষিণে প্রায় ১ শ’ কিলোমিটার বা অধিক এলাকায় সাগরের গভীরতা কমে গেছে। ফলে সরকার কক্সবাজার জেলার মগনামা, উজানঠিয়া, মাতারবাড়ী অংশকে অত্যধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। যেহেতু এখানে পানির গভীরতা অত্যধিক। অপরদিকে দেশের মূল ভূমি থেকে প্রায় ৪/৫ কি.মি ব্যবধানে কুতুবদিয়া দ্বীপ। নৌবাহিনী ঘাঁটি, মাতারবাড়ী বহুমুখী প্রকল্পের কল্যাণে কুতুবদিয়া দ্বীপকে নিরাপত্তার দেয়াল বলা যেতে পারে। এদিকে কক্সবাজার নদী বন্দর ১৫/২০ বছর বা তারও আগে থেকে পলি ভরাট হয়ে অনেকটা গুরুত্ব হারাচ্ছে। ছোট বড় জাহাজ অনেক দূরে গিয়ে নোঙ্গর করতে হচ্ছে। বর্র্তমান মাতারবাড়ী একাধিক প্রকল্পে হাজার হাজার লোক কর্মরত। এখানে বিদেশ থেকে জাহাজ এসে ভিড়ছে। দু’টি জেটি চালু করা হয়েছে। সরকার এখানেই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করতে যাচ্ছে। অপরদিকে যেহেতু কর্ণফুলীর গভীরতা আগের মতো নেই। তাই বাংলাদেশ নৌবাহিনী পেকুয়া উপজেলার মগনামার দক্ষিণাংশকে বেছে নিয়েছে। এখানে নৌবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।

মাতারবাড়ী বহুমুখী প্রকল্প এবং মগনামা নৌবাহিনী ঘাঁটির কল্যাণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে দু’টি পৃথক বড় বড় রাস্তা মাতারবাড়ী-মগনামা সংযোগে নির্মিত হচ্ছে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে।

এসব কিছুর মূলে আছে এ কুতুবদিয়া চ্যানেলের গভীরতা যথাযথ তথা চাহিদা মত আছে বলে। এই চ্যানেল সুরক্ষায় এখন থেকে সরকার সতর্ক না হলে ভবিষ্যত দেশের বিরাট ক্ষতি হতে পারে।

বিদ্যমান অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব হবে উজানঠিয়ার পূর্ব দিকে বদরখালীর পশ্চিম সংলগ্ন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে চর পরিষ্কার করে দেয়া। একই সাথে মহেশখালী-বদরখালীর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ দিকে কক্সবাজারমুখী মাতারবাড়ী নদীর পানির প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখা। উজানঠিয়া খালের পূর্ব পাশের বদরখালী পশ্চিম সংলগ্ন চরটি পরিষ্কার করে দিলে মাতামুহুরী নদীর পানি সাবেক নিয়মে মহেশখালী উপজেলার পূর্বপাশ দিয়ে কক্সবাজার নদীবন্দর হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হবে।

Exit mobile version