parbattanews

মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি জাইকার

রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মাতারবাড়িতে সুশিল সমাজ ও প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় জাইকা

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মাতারবাড়িতে স্থাপিত কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলেন জাপানের ইন্টান্যাশনাল কোম্পানী জাইকা। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মাতারবাড়িতে সুশিল সমাজ ও প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় জাইকা এই প্রতিশ্রুতি দেন। সকাল সাড়ে ৯ টায় মহেশখালীর মাতারবাড়ি মজিদিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসার হলরুমে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

দেশের বৃহত্তর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল-পাওয়ার ও প্রকল্প অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকা’র উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উক্ত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। এতে জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কর্মকর্তাসহ কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর প্রকল্প পরিচালক গোলাম কিবরিয়া’র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ, জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য মাষ্টার মশরফা জন্নাত, মাতারবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু হায়দার , সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী রুহুল , সাবেক চেয়ারম্যান কবির আহমদ , আওয়ামী লীগ নেতা জিয়া উদ্দিন, মাষ্টার নুর বক্স, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মোঃ সাহাব উদ্দিন, ইউপি সদস্য হামেদ হোছাইন, শ্রমিকদের পক্ষে নুরুল আবছার, মোহাম্মদ আলী প্রমূখ।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়নের মেঘা প্রকল্প নির্মাণে এতদাঞ্চলের উন্নয়ন তরান্বিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রকল্প নির্মাণ করতে গিয়ে জমির মালিক কিংবা শ্রমিকের যে ক্ষতি হবে সে দিকে লক্ষ্য করে তাদেরকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনসহ শ্রমিকের ন্যায্যমুল্য পরিশোধ করার নির্দেশনা থাকলেও তা কোন ধরনের তোয়াক্কা করছে না বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।

তারা বলেন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ কাজে ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো মাতারবাড়িবাসির ন্যায্যমুলক ক্ষতিপুরণ পরিশোধ করতে পারেনি কোল-পাওয়ার কর্তৃপক্ষ।প্রকল্পে যে ৪৫টি পরিবার উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদেরকে ১ বছর পরেই পুনর্বাসন করার কথা বললেও ৫ বছরে মাত্র ১০ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এতে বাকি ৩৫ টি পরিবারের পুনর্বাসন নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের কাজে মাতারবাড়ির চতুর্পাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে যে সমস্ত পানি নিষ্কাশনের স্লুইচগেট ও পলবোট বন্ধ করে দিয়েছে তার পরিবর্তে মাতারবাড়ির পানি নিষ্কাশনের জন্য কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর পক্ষ থেকে স্লুইচগেট নির্মাণের কথা থাকলেও সে স্লুইচগেটও তারা এখনো নির্মাণ করে দেয় নি । ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে পুরো মাতারবাড়ীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সিমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দ্বীপবাসি কে। তাই অতি শীঘ্রই পানি নিষ্কাশনের জন্য স্লুইচগেট নির্মাণের দাবি জানান বক্তারা।

তারা আরো বলেন , বিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকুরীরত শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য দুর করে শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হবে । ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও শ্রমিকের চেক নিতে হয়রানি বন্ধ করে আরো দ্রুত কাজের গতি বাড়ানোর আহবান জানান। মাতারবাড়ির ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধটি টেকসইভাবে নির্মাণ করে দ্বীপবাসিকে বিপদ মুক্ত করতে আহবান জানিয়ে বক্তারা বলেন , মাতারবাড়ির এক মাত্র সড়কটি অত্যন্ত ঝুকিঁপূর্ণ ও সরু হওয়ায় প্রায় সময় কোন না কোন জায়গায় ঘটছে দুর্ঘটনা, তার মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহারকৃত গাড়ি এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করায় আরো বেশী ঝুকির সম্মুখীন হচ্ছে ইউনিয়নবাসি।

তাই কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতেও অনুরোধ জানান বক্তারা । কোল-পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর প্রকল্প পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও শ্রমিকের অভিযোগসহ মাতারবাড়িবাসির যে সমস্ত যৌক্তিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে তা শীঘ্রই সে গুলো ধাপে ধাপে পুরণ করার আশ্বাস দেন।

মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, মহেশখালী প্রেসকাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভোরের কাগজের মহেশখালী প্রতিনিধি সাংবাদিক এম বশির উল্লাহ , সংবাদকর্মী আবু বক্কর ছিদ্দিক , ইউপি সদস্য শাহাদাত হোছাইন নাছির , মহিলা ইউপি সদস্য ছকুনতাছ আতিক , মানবাধিকার কর্মী মৌলানা মোঃ মহসিন, আলী আজগর প্রমূখ।

মত বিনিময় সভার পরে মহেশখালী জনসুরক্ষা কমিটির পক্ষে কোল পাওয়ার ও জাইকা কে ১৫ দফা দাবী সম্মিলিত একটি স্বারকলিপি দেওয়া হয়।

Exit mobile version