parbattanews

মাত্র ৪ দিনের মাথায় মাটিরাঙার গোমতিতে আবারো বাঙালী বাড়িতে আগুন দিল ইউপিডিএফ

30

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

মাত্র ৪ দিনের মাথায় মাটিরাঙ্গার গোমতির ভবানিচরণ রুয়াজা পাড়া সরকারী প্রাথমিক স্কুলের পাশে আবদুর রশীদের বাড়িতে সশস্ত্র উপজাতীয় সন্ত্রামীরা আরোরো আগুন দিয়েছে। আজ রাত পৌণে নয়টা দিকে এ ঘটনা ঘটে।  এর আগে গত বুধবার গভীর রাতে বান্দরছড়ার শিশু মিয়া যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখনই ইউপিডিএফের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে প্রবেশ করে গোয়াল ঘরে অগ্নি সংযোগ করে। এ নিয়ে গত ১ মাসে গোমতিতে ১০টি বাড়িতে উপজাতীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ ইউপিডিএফ বাঙালী বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলো।

জানা গেছে রাত পৌণে ৯টার দিকে ১৫/১৬ জনের ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল মাটিরাঙ্গার গোমতির ভবানিচরণ রুয়াজা পাড়া সরকারী প্রাথমিক স্কুলের পাশে আবদুর রশীদের বাড়িতে তৃতীয়বারের মতো অগ্নি সংযোগ করে। তবে আগুনের লেলিহান শিখা ৪দিকে ছড়িয়ে পড়ার আগেই স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা গোমতি এলাকাকার বাঙালীদেরকে সর্বশান্ত করে উচ্ছেদ করার লক্ষ্য থেকে একের পর এক অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটিযে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাঙালী পার্বত্যনিউজকে জানিয়েছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনকে অবহিত না করে অজ্ঞাত কারণে গোপন রেখে চলেছেন। গোমতির কয়েকটি সূত্র দাবী করেছে, জনপ্রতিনিধিদের সাথে ইউপিডিএফ’র সখ্যতার কারণে তারা বিষয়টি গোপন রেখে চেলেছেন।

নির্যাতিত বাঙালীদের কেউ কেউ নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেছেন, কয়েকজন জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ইউপিডিএফকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মে সহায়তা করে যাচ্ছে। মূলত: গোমতি বাজার এলাকায় অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্প প্রত্যাহার হয়ে যাওয়ার পর ইউপিডিএফ নির্ভয়ে বাঙালীদের উপর অত্যাচার করার সাহস পাচ্ছে।  ফলে স্থানীয় বাঙালীরা অবিলম্বে ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসী  কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি বন্ধে  গোমতিতে আবারো সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে একই গ্রামের মোটা অঙ্কের চাঁদার দাবীতে বান্দরছড়া গ্রামের নয় বাঙ্গালী বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গত বুধবার গভীর রাতে বান্দরছড়ার শিশু মিয়া যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখনই ইউপিডিএফের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে প্রবেশ করে গোয়াল ঘরে অগ্নি সংযোগ করে। এতে তার পালিত দুটি গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে পুড়ে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা অন্যান্য ঘরে স্পর্শ করার আগেই স্থানীয়দের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। এসময় গরু বাচাতে গিয়ে আহত হন শিশু মিয়া। এর আগেই গত দুই মাস পুর্বে সন্ত্রাসীরা একই কায়দায় শিশু মিয়ার বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করে সন্ত্রাসীরা।

শিশু মিয়া বলেন, এর আগে আমার ঘর পুড়ে দিলে বিজিবির সহায়তায় আমি আবারও ঘর করেছি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো: জয়নাল আবেদীন জানান, গত দুই মাসে ব্যবধানে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা এর আগেও একই এলাকার আবদুল জলিল, মো: জাকির মিয়া, নমির হোসেন, আবদুল করিমসহ নয় বাঙ্গালীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে করে বাঙ্গালীরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বাঙ্গালীরা রাতভর পালাক্রমে পাহারা দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গোমতিতে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা বাঙ্গালী বাড়িতে একের পর এক অগ্নিসংযোগ, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, বাগান কেটে ফেলা, বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন চললেও কেউই বাঙ্গালীদের কোন খবর নেয়না। উল্টো বাঙ্গালীদের উপর দায় চাপিয়ে বাঙ্গালীদেরকেই দায়ী করা হচ্ছে।

এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ মে ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি পঞ্চসেন ত্রিপুরাকে হত্যার পর থেকেই ইউপিডিএফ কৃষি নির্ভর গোমতি ইউনিয়নে তাদের একক আধিপত্য বিস্তারে মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ গোমতির ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের কাছে চিঠি দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবী করে। দাবী কৃত চাঁদা না পেয়ে ইউপিডিএফের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দুই দফা গোমতি বাজারে হামলা ও লুটপাট করে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিজিবির হস্তক্ষেপ ও স্থানীয় বাঙ্গালীদের ঐক্যের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠলেও তারা পদ্ধতি পরিবর্তন করে বাঙ্গালীদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করে।

এর আগেও গত বছরের ১৮ অক্টোবর ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো: মনির হোসেনকে চিঠি দেয় ইউপিডিএফের মাটিরাঙ্গা ইউনিট সংগঠন। নির্ধারিত সময় বেধে দিলেও তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তার সৃজিত বাগানের প্রায় দুই হাজারেরও বেশী বিভিন্ন প্রজাতির কলাগাছ কেটে ফেলে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

 

Exit mobile version