parbattanews

কক্সবাজার মাদক পল্লীতে প্রকাশ্যে দৈনিক বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার ইয়াবা

456
ওমর ফারুক হিরু :
কক্সবাজার শহরে ২৫ জনেরও বেশি রয়েছে পাইকারী ইয়াবা বিক্রেতা। আর শতাধিক রয়েছে খুচরা বিক্রেতা। যাদের মাধ্যমে পুরো শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা। যারা দৈনিক বিক্রি করছে কোটি টাকার ইয়াবা। পাইকারী ইয়াবা বিক্রেতারা শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও বড় একটি অংশ অবস্থান করে শহরের বড়বাজারস্থ পূর্ব মাছ বাজার এলাকায়। যেখানে তারা স্থায়ীভাবে দীর্ঘদিন চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। ওই এলাকাটি রীতিমত ইয়াবা পল্লীতে পরিণত হয়েছে। যেখানে প্রকাশ্যে ঘরে ঘরে চলে ইয়াবা বিক্রি ও সেবন। ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা হাতে নিয়ে ফেরি করছে ইয়াবা ও সেবনের সরঞ্জাম। এমনকি রাস্তার উপর মাদকসেবীরা প্রকাশ্যে সেবন করছে ইয়াবা। ওই এলাকায় ঢুকে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যায় ইয়াবা। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের রয়েছে ব্যক্তিগত লোক। যারা মাদকসেবীদের কাছে পৌঁছে দেয় ইয়াবা।

ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার গলিতেই ৩-৪ জন যুবক ইয়াবা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিক্রির জন্য। একটু ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, ৪-৫ জন করে ৭-৮ টি দলে বিভক্ত হয়ে সেবন করছে ইয়াবা। ওখানে নানা শ্রেণীর লোকজন আসছেন আর ইয়াবা ক্রয় করে চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার ওখানেই সেবন করছেন। এই দৃশ্য চলে সকাল থেকে রাত অবধি।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শুধু পূর্ব মাছ বাজার নয় শহরের বৈদ্যঘোনা, বইল্ল্যা পাড়া, টেকপাড়া ও চাউল বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে পাইকারী ও খুচরা ইয়াবা বিক্রেতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ব মাছ বাজার এলাকার পাইকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা হলেন, আম্মা রাখাইন (৩০), চশমানী (৪৫), পিংকির মা (৪৫), পিংকি (২৫), বোলাম মা, ওসামে রাখাইন (৩২), পানখুরী বুড়ি (৪৫), ওই এলাকার জসিম মুন্সির ভাড়াটিয়া রাসেল (৩৪) ও তার স্ত্রী ছেনু (৩২), আবুথিনি রাখাইন (২৭), মংছিহ্লা (৩৫), মগ ভূট্টো (৩২), বাজারঘাটাস্থ হাবিব বোডিং এর পিছনের বাসিন্দা বাবুল (৩০) ও তার মা, চাউল বাজার এলাকার নাছির উদ্দীন রুনো ও তার স্ত্রী নাছরিন আক্তার, বৈদ্যঘোনাস্থ খাঁজা মঞ্জিল এলাকার জব্বর, বইল্ল্যা পাড়ার বালিবু (৪০), মো. মুসা (২৮), মৃত বাদশার ছেলে মো. রফিক (৩২), পাহাড়তলীর পান শুক্কুরের ছেলে আজিম (৩৫) ও বুলো (৩২)।

এসব মাদক ব্যবসায়ীরা দৈনিক কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি করে। এদের মধ্যে আম্মা রাখাইনের মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করেন আজিজ ও অংশালা। যারা ক্রেতাদের কাছে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আম্মা রাখাইনের দৈনিক ইয়াবা বিক্রির ৩ লক্ষ টাকারও বেশি। পিংকি ও পিংকির মায়ের বিক্রি করে ২ লক্ষ টাকার বেশি। বোলার মা’ই হচ্ছে ওই পাড়ার সবচেয়ে বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার দৈনিক বিক্রি ১০ লক্ষ টাকারও বেশি। তারা ইয়াবার পাশাপাশি হেরোইনও বিক্রি করে।

নোঙ্গর (মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র) পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ বলেন, গত ১৫ বছর আগে যারা মাদক ব্যবসা করত তাদের মধ্যে অনেকে আজ অবধি মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে। আর এর কারণ হল নানা অব্যবস্থাপনা। দেখা গেছে, এসব মাদক ব্যবসায়ীরা একাধিকবার জেল-জরিমানার পরও পুনরায় ব্যবসা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন মহলকেও এগিয়ে আসতে হবে মাদকমুক্ত কক্সবাজার বির্নিমানে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব মাদক ব্যবসায়ীকে জেল-জরিমানা আওতায় আনা হয় তারা কদিন পরেই জেল থেকে ছাড়া পায় আর জরিমানাও করা হয় কম। শাস্তি শেষে ওই মাদক ব্যবসায়ী পুনরায় অপকর্ম চালায়। এটি যেন গ্রেফতার আর মুক্ত হওয়ার খেলা। মাদক ব্যবসা নির্মূল করতে চাইলে অবশ্যই এই খেলা বন্ধ করে স্থায়ীভাবে নিমূর্ল করতে হবে মাদক ব্যবসা কেন্দ্রগুলো। গ্রেফতার করতে হবে বিক্রেতাদের।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (কক্সবাজার) পরিদর্শক ধনঞ্জয় চন্দ্র দেবনাথ জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা অনেক মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করিয়েছেন।

কক্সবাজার সদর থানার অপারেশন ইনচার্জ আব্দুর রহিম জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে প্রশাসন বরাবরই সক্রিয় রয়েছে। আর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আইন অনুযায়ী মাদক ব্যবসায়ীদের শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে।

Exit mobile version