মানচিত্র তৈরি করে অপরাধী ধরেন ঈদগাঁও থানার ওসি

fec-image

কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও থানার এক বছর পূর্ণ হলো। গত বছরের ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে থানা উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। প্রথম ওসির দায়িত্ব নেন আবদুল হালিম। সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অভিযোগ বা মামলা করতে টাকা লাগে না। থানা এখন সেবা বান্ধব, দালালমুক্ত। গেল একটি বছরে ৯১টি মামলা রেকর্ড হয়েছে।

ওসি হিসেবে নয়, জনগণের অতিসাধারণ বেশে জনগণের পাশে থাকেন আবদুল হালিম। মানুষের স্বপ্নের পুলিশ হতে কাজ করছেন নিরলস।

ওসি হিসেবে যোগদান করেই এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এবং অপরাধী ধরতে এলাকাভিত্তিক মানচিত্র তৈরি করেন আবদুল হালিম। সে মোতাবেক ৫টি ইউনিয়নে পুলিশ অফিসারদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। যখন পুলিশ সদস্যরা অপারেশনে থাকেন তখন ওই মানচিত্র দেখে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

ঈদগাঁওকে মাদকমুক্ত রাখতে ওসি আবদুল হালিমের নেতৃত্বে অভিযান চালমান। কাজের বেলায় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করেন। ইতোমধ্যে কুখ্যাত মাদক কারবারিরা গ্রেফতার হয়েছে। দীর্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন।

সম্প্রতি সময়ে ঈদগাঁও থানা চত্বরে ফুলের বাগান ও ওয়াটার স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করেছেন ওসি আবদুল হালিম। তার উদ্যোগে থানা চত্বরটি যেনো ফুলের বাগানে রূপান্তরিত হয়েছে।

করোনা কিংবা কোভিড-১৯ নামে এক ঘাতকের আঘাতে পৃথিবী যখন অচেনা। পূর্ব থেকে পশ্চিম কিংবা উত্তর থেকে দক্ষিণ পুরো গ্রহটাই যেন লন্ডভন্ড। ছোঁয়াচে এক অদৃশ্য জীবাণুর কারণে সবাই ভয়ে তটস্থ। আপন মানুষগুলোও যেন পর হয়ে গেছে। প্রিয়জনও দূরে সরে গেছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রমও রয়েছে। মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে অন্যের সাহায্যে ছুটে গিয়েছেন ওসি আবদুল হালিম।

একজন নেতা যেমন কর্মীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে নেতৃত্ব প্রদান করে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যান, একজন কোচ যেভাবে কনফিডেন্স লেভেল তৈরি করে শিষ্যের কাছ থেকে সেরাটুকু বের করে নিয়ে আনেন একইভাবে তিনি তাঁর অফিসারদের কনফিডেন্স লেভেল তৈরি করে কাজ করিয়ে নেন।

শত বিপদে, প্রতিকূলতার মধ্যে যিনি বট গাছের ন্যায় আগলে রাখেন অধীনস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, সদস্যদের। ভালোবাসায় মুগ্ধ হন সাধারণ মানুষও।

স্থানীয়দের ধারনা টাকা ছাড়া থানায় কোনো কাজ হয় না। এমনটা ধারণা পাল্টে দিয়েছেন ওসি আবদুল হালিম। ঈদগাঁও থানা নামে ফেসবুক ফেইজে নিয়মিত জনবান্ধন কর্মকান্ড গুলো পোস্ট করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অনেকের মাঝে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ বলেন, এক সময় থানায় সাধারণ মানুষ যেতে ভয় পেত। কিন্তু সেটি পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছেন ওসি। সাধারণ মানুষের ভয় কেটেছে পুলিশের প্রতি। সেবা প্রাপ্তির লক্ষে পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছে এখন সাধারন মানুষ।

স্থানীয় শিক্ষক আবদুল কাদের বলেন, ওসি আবদুল হালিম এই থানায় যোগদানের পর থেকেই এখানে দালালদের দৌরাত্ম কমে গেছে। তিনি দালালদের সতর্ক করে থানায় তদবিরের জন্য না আসতে বলে দিয়েছেন। সেবা প্রার্থীরা দালাল ছাড়াই নির্দ্বিধায় থানায় আসা-যাওয়া করতে পেরেছেন। দালাল ধরে এখন আর কাউকে থানায় আসতে হয়না।

ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হক চৌধুরী রিকু বলেন, সেবা প্রার্থীদের সকল ধরনের সহযোগিতা করার জন্য থানার সকল অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছেন ওসি। সেবাদানের ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনো রকম হেরফের করেন নি। জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করাই ছিল তাঁর কাজ।

জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ বলেন, সামাজিক সমস্যা নিরসনে ওসি আবদুল হালিম তার অফিস কক্ষে নিয়মিত সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনে থাকেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় অপরাধীদের আনাগোনা এলাকায় অনেকটাই কমে গেছে। তাঁর এ উদ্যোগ পুলিশের হারানো ভাবমূর্তি যেমন ফিরে এসেছে। তেমনি সবকিছু মিলিয়ে ঈদগাঁও থানার ওসি আবদুল হালিম সাধারণ মানুষের কাছে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন পুলিশ শোষক নয়, জনগণের বন্ধু।

ঈদগাঁহ জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিবেশ দেখভালের পাশাপাশি সহকর্মী পুলিশ সদস্যদের জন্য ওসি কাজ করেছেন নিরলসভাবে। দায়িত্ব নিয়েই থানার সব পুলিশ সদস্যদের সমানভাবে দায়িত্ববণ্টন করে দেন তিনি। তার কাজের সাফল্য ধারাবাহিকতা-কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে ঈদগাঁওর ইতিহাসে।

ঈদগাঁও থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা শামীম আল মামুন বলেন, ওসি স্যারের অসংখ্য সৃজনশীল নির্দেশনা তৈরি করে অধীনস্থ অফিসারদের নিয়ে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে উপজেলাবাসীর কল্যাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া সুপার হিরো আমাদের অভিভাবক আবদুল হালিম স্যার। স্যারের নির্দেশনা পালনে সব সময়ই প্রস্তুত। তার অনুপ্রেরণাই কাজের প্রতি কমিটেড করে দেয় আমাদেরকে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম বলেন, থানা দালাল ও দুর্নীতিমুক্ত। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা। অনেক দাগি আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। ইয়াবা ও অস্ত্র, মাদক উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চলমান আছে।

তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। জনগণের জানমাল হেফাজতের দায়িত্ব আমাদের। আইন শৃঙ্খলার কাজে সাধারণ মানুষ যেন পুলিশকে সহযোগিতা করে।

আবদুল হালিম বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশনা ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় থানা উদ্বোধনের পর কর্মস্থলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

আইনের সেবক হয়ে জনতার সারিতে থেকে সাধারণ মানুষের সেবা করে যাবো, প্রতিটি মানুষ আমাকে খুব কাছ থেকে পাবে এবং তাদের সমস্যার কথা গুলি বলতে পারবে ঠিক তেমনভাবে আমি ঈদগাঁও উপজেলা বাসির জন্য কাজ করব। একজন সাধারণ মানুষ যখন আইনের সেবকদের কাছে ন্যায় বিচার পাবে ঠিক তখনি মানুষের মাঝে পুলিশের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস জেগে উঠবে।

আমি মনে করি সাধারণ মানুষ যখন আমাদের কাছে আসতে পারবে ঠিক তখনি তারা অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে ফিরে আসবে। একজন পুলিশের কাছে সেটাও সম্ভব একজন অপরাধীকে ঘৃণার দৃষ্টিতে না দেখে আইনের মাধ্যমে তাকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখে আলোর পথে নিয়ে আসা। আমরা চেষ্টা করতে পারি তাকে ভালো করার সুযোগ দেয়ার। আপনারা আমাদের সাহায্য করুন আমরা সত্যিই মানুষের স্বপ্নের পুলিশ হতে চাই।

এসময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ২০৪১ সালে আমরা যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সে উন্নত বাংলাদেশের আমরাই হবো উন্নত পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন