মানিকছড়িতে অবাধে চলছে অবৈধ কাঠ পাচার : বন বিভাগের ভূমিকা রহস্যজনক

 

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) সংবাদদাতা :

মানিকছড়ি উপজেলার আন্তঃসড়কে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে চলছে অবৈধ কাঠ পাচার। উজার হয়ে যাচ্ছে মানিকছড়ির বনাঞ্চল। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। পারমিটবিহীন কাঠ পাচাররোধে মাঠে সেনাবাহিনীর অভিযান চললেও বন বিভাগের ভূমিকা রহস্যজনক! গত এক সপ্তাহে পৃথক পৃথক অভিযানে চোরাই কাঠ জব্দ হলেও বন বিভাগ তা পরিমাণ বলতে নারাজ। ব্যবসায়ীদের ধারণা আটক কাঠের আনুমানিক বাজার মূল্য অর্ধ কোটি টাকা।

স্থানীয় বনবিভাগ ও সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, মানিকছড়ির আন্তঃসড়ক দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী কাঠ ব্যবসায়ীর একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে কাঠ পাচার করে আসছে। এতে করে দিনের পর দিন উজার হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। দেখা দিচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা। পার্বত্যাঞ্চলের বনজ সম্পদ রক্ষায় সেনাবাহিনী একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করলেও থেমে থাকেনি পাচারকারী চক্রের কার্যক্রম।

গত এক সপ্তাহে মানিকছড়ি সাব জোনের সেনাবাহিনী সদস্যরা পৃথক পৃথক অভিযানে সেগুন, আকাশি, গামারী, গোদাসহ পাঁচ হাজার ঘনফুট গোল কাঠ বিভিন্ন ডিপো থেকে জব্দ করে বন বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আটক কাঠের বাজার মূল্য অর্ধ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে কাঠ ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে।

এদিকে গত ১০ ও ১১ জুলাই অবৈধ কাঠ পাচারকারীদের আটক করতে গিয়ে বাঁধার কবলে পড়তে হয়েছে সেনাবাহিনীকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে কাঠ বোঝাই ট্রাকটি মানিকছড়ি থেকে ফাঁড়ি পথে চট্টগ্রামের দিকে যাওয়ার সময়ে সেনাবাহিনীর একটি দল চোরাই ট্রাকটিকে থামাতে বললে চালক গাড়ীর গতি বাড়িয়ে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু চৌকস সেনাবাহিনী চট্ট মেট্রো-ট ১১-৪১৩ নাম্বারের ট্রাক ১৪৫০ঘনফুট কাঠসহ আটক করে।

পরদিন আবার সেই ট্রাকেই অবৈধভাবে কাঠ বোঝাই করে পাচারকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গাড়ীটিকে আটক করতে পিছু নিলে ব্যবসায়ীরা সেনাবাহিনীর গাড়ীকে লক্ষ্য করে একাধিকবার কাঠের গুঁড়ি (টুকরা) ফেলে বাঁধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে ফটিকছড়ির ভূজপুর এলাকায় গিয়ে ট্রাকটি রাস্তার পার্শ্বের গর্তে পড়ে যায়। পরে গাড়ীটি আটক করে ৪৫০ঘনফুট গোল কাঠসহ ভূজপুর থানায় দেয়া হয়।

এ ঘটনায় গাড়ীটানা ও নারায়ণ হাট বনবিভাগে পৃথক দু’টি এবং ফটিকছড়ির ভূজপুর থানায় সরকারি কাজে বাঁধাদান ও সেনা সদস্যদের হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে সেনাবাহিনীর মানিকছড়ি ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. গোলাম মোস্তফা  স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম ও ট্রাক চালকসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ভূজপুর থানায় ধারা ১৮৬/৩৫৩ দ.বিধিসহ ১৯২৭ সালের বন আইনের ৪২ ধারায় মামলা রজু করে।

কিন্তু ৫ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনো আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এরপর ওই দিন রাতেই সেনা সদস্যরা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের গচ্ছাবিলস্থ বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার টুকরা কাঠের সন্ধান পায়। পরে গাড়িটানা বনবিভাগকে খবর দিয়ে এসব মালামাল তালিকা করতে বললেও তাতে বন কর্মকর্তা টালবাহানা শুরু করে। গতকাল ১৬ জুলাই পর্যন্ত ৯০০ ঘনফুট ছাড়াও ৭৩৯ পিস গোল কাঠ পুকুর ও কেজি স্কুলের মাঠ থেকে জব্দ দেখানো হয়েছে। অন্যগুলোর পারমিট রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত করেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে জনমনে এবং ব্যবসায়ীদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে গাড়িটানা বন কর্মকর্তা, ননী গোপাল দাস বিরক্তসুরে বলেন, কাঠের পরিমাণ অফিসে গিয়ে জেনে আসবেন আর এভাবে লেখালেখি করবেন না।

এ প্রসঙ্গে সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডার লে.কর্নেল রাব্বি আহসান জানান, পারমিটবিহীন কাঠ পাচার রোধে সেনাবাহিনী বন সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে মাত্র। আইন মেনে ব্যবসা করতে কারো বাঁধা নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন