মানিকছড়িতে আম চাষে শতাধিক প্রান্তিক চাষীর ভাগ্য বদল

fec-image

পাহাড়ে আম চাষ করে অর্থনীতির চাকা পাল্টে দিচ্ছে প্রান্তিক চাষীরা। খাগড়াছড়ির আম দ্রুত সময়ে দেশ-বিদেশে জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় প্রান্তিক কৃষক প্রতিযোগিতা দিয়ে আম চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছে। মানিকছড়ি উপজেলার ছোট, মাঝারী ও বড় শতাধিক প্রান্তিক চাষীর ভাগ্যের চাকা পাল্টে দিয়েছে আম চাষ। তারা সকলে এখন আম চাষে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় প্রান্তিক চাষীরা আম চাষে ভাগ্য বদলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এখানে অন্তত ১৫/২০ জন বড় চাষী গড়ে ১৫, ২০ ও ৩০ একর জায়গা জুড়ে নানা প্রজাতির আম চাষ করে সফল হয়েছে। এদের ধারাবাহিক সফলতা দেখে ক্ষুদ্র ও মাঝারী প্রান্তিক চাষীরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে উপজেলায় আম চাষ বেড়েছে শতগুন। এখানকার বড় আম বাগান ও মিশ্র ফলজ বাগানের মধ্যে চেম্প্রুপাড়া, বড়বিল, কুমারী বড়টিলা, লেমুয়া, মলঙ্গীপাড়া, গচ্ছাবিল, মধ্যম তিনটহরী, পাক্কাটিলা ,হাতিমুড়া, ওসমানপল্লী, বড়ডলু, গাড়ীটানা, তুলাবিল, ডাইনছড়ি, বাটনাতলী, এয়াতলংপাড়া এলাকায় বড় বাগান মালিকদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারী চাষীরাও বিভিন্ন লোকালয়ে সফলতার স্বপ্নে বাগান সৃজন করেছে ।

এসব বাগান মালিকরা আম চাষে সফলতা পেয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। দিন দিনে পাল্টে যাচ্ছে পাহাড়ে অর্থনীতির চাকা। এছাড়া এসব বাগানে শত শত শ্রমিক বছরে অন্তত দেড়, দুই মাস অনায়াসে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

কুমারী বড়টিলাস্থ লেমুয়া গার্ডেন এর আম বাগান লিজ নেওয়া মো. ইউসুফ মিয়া জানান, আমরা দুইটি বাগানে প্রায় ৬ হাজার গাছে ৪ বছর ধরে ফল আসছে। এই ফলের মৌসুমে টানা দুই মাস ২০জন শ্রমিক সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করছে। বাগানে আম্রপালি, হাড়িভাঙ্গা, হিমসাগর আম রয়েছে। রসালো ও মিষ্টিগুণে সমাদৃত আম ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ঢাকার বাজার দখলের পাশাপাশি অনলাইনে একাধিক প্রতিষ্ঠান আমার বাগান থেকে আম সংগ্রহ করছে।

পাক্কাটিলার মো. জাহেদুল আলম মাসুদ বলেন, এখানকার পাহাড় মানুষের ভাগ্য বদলের সহায়ক। পরিকল্পনা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে যে কেউ ফলজ বাগান সৃজন করে নিজেকে পাল্টে দিতে পারে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম.এ. রাজ্জাক বলেন, পাহাড়ের মাটি ও মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক সর্ম্পক গড়ে উঠেছে। এখানে যে কেউ একটু পরিশ্রমী হলে এবং সুপরিকল্পনা নিয়ে আম চাষ বা মিশ্র বাগান করে অল্প সময়ে লাখপতি বা কোটিপতি হওয়া সম্ভব।

বড় প্রান্তিক চাষীর গল্প ও সফলতা দেখে জনপদে নতুন নতুন ক্ষুদ্র ও মাঝারী চাষীরা আম চাষে মনোযোগ বৃদ্ধি করে সফলতা পেয়েছে। বড়ডলু এলাকার ক্ষুদ্র চাষী মো. ইউনুছ মিয়ার বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, ১ একর ৬০ শতক পৈত্রিক ভিটায় একশত আম্রপালি আম চাষ করে নিজেকে পাল্টে দিতে সক্ষম হয়েছেন মো. ইউনুছ মিয়া। এই সফল ক্ষুদ্র চাষী জানালেন তার সফলতার গল্প।

তিনি বলেন, আমার বাবা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর চাঁদপুর শাহরাস্তি থেকে এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। এই অল্প ভূমিতে প্রথমে বনজ বাগ-বাগান করে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আমরা জীবিকা অর্জন করতাম। সম্প্রতি পাহাড়ে ফলজ বাগানের সফলতা দেখে আমরা ৪ কানি (১ একর ৬০ শতক ) জায়গায় চায়না থ্রি লিচুর বাগান সৃজন করি। দীর্ঘ সময় পুঁজি ও শ্রম দিয়েও লিচুতে সফল হতে পারিনি। ফলে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে লিচু গাছ কেটে ধীরে ধীরে আম্র পালি আম চাষে ধাবিত হই। এতেই ভাগ্যে পরির্বতনের ছোয়া লাগে। গত ৪ বছরে আমার একশত আম গাছ থেকে গড়ে ৩০, ৪৫, ৬৫, ৭৫ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছি। এবার ১ লক্ষ টাকার আম বিক্রি করার টার্গেট রয়েছে। বাগানে প্রতিমণ আম বিক্রি করছি ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে। পাহাড়ের ভূমিতে পরিকল্পিত উপায়ে আম চাষে ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী ডিপ্লোমা কৃষিবিদ অঞ্জন কুমার নাথ জানান, এখানে প্রতিনিয়ত মানুষ আম চাষে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে। আমরা তৃণমূলে প্রান্তিক চাষীদের ফলজ ও বনজ বাগান সৃজনে, গাছে ফুল-ফলের পরিচর্যায় প্রতিনিয়ত কাছে থেকে পরামর্শ দিচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিনুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, পাহাড়ের মাটি ও মানুষ বাগান সৃজনে অত্যান্ত আগ্রহী। ফলে আমার কৃষি বিভাগের একঝাঁক উপসহকারী তৃণমূলে প্রান্তিক চাষীর দ্বারে দ্বারে গিয়ে বাগান সৃজনে, ফুল-ফল রক্ষণা-বেক্ষণে, রোগ-বালাই দমনে কাজ করছে। এ বছর এখানে প্রায় ১১শ হেক্টর জমিতে নানা প্রজাতির আম চাষ হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে কিছু বাগানে ফল কম হলেও অধিকাংশ বাগানে সেচ সুবিধা ও মাটি উর্বর থাকায় ফলন ভালোই হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন