মানিকছড়িতে একই জায়গায় অননুমোদিত দুই কলেজ: শিক্ষার্থী টানাহেঁচড়া

fec-image

মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ থেকে এক কিলোমিটার দূরে মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী সরকারি ডিগ্রী কলেজ। ঠিক মধ্যখানে আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী কার্যালয়ের পিছেন গত ৩ বছর ধরে অনুমোদন ছাড়াই অন্য কলেজে ভর্তি দেখিয়ে মানিকছড়ি পাবলিক কলেজে চলছে বেআইনি পাঠদান। চলতি শিক্ষাবর্ষে ঠিক ওই জায়গায়ও টিনসেড ঘরে মানিকছড়ি মহিলা কলেজে ভর্তি কার্যক্রমের সাইন বোর্ড ও ব্যানার দেখে অবাক হচ্ছে সচেতনমহল। আর শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন তামাশা করে পার পেয়ে যাচ্ছেন সরকারি কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. রশিদুল ইসলাম। শিক্ষানীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন বেআইনী পাঠদান চলমান এবং নতুন ছাত্রী ভর্তির আয়োজন চললেও প্রশাসন এখনও নির্বিকার।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় আটটি মাধ্যমিক ও দুইটি দাখিল মাদরাসা এবং অনুমোদিত দুইটি( একটি সরকারি) কলেজ রয়েছে। মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী সরকারি ডিগ্রি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ। সরকারি দপ্তরের নথিপত্রে এই উপজেলায় আর কোন কলেজ নেই।

অথচ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে মানিকছড়ি পাবলিক নিয়মিত শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান করাচ্ছে! আর শিক্ষা নিয়ে এই বেআইনি কাজটি করছেন সরকারি কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. রশিদুল ইসলাম! আর কলেজের শিক্ষক হচ্ছেন অনার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী!এবার উপজেলায় এসএসসি ও দাখিলে ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। তারা এখন কলেজে ভর্তির অপেক্ষায়। এমন সময় পাবলিক কলেজের ভেন্যু ও আধাপাকা টিনসেড ভবনে মহিলা কলেজে ভর্তির আয়োজনে সচেতন মহল উদ্বিগ্ন।

এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে পাবলিক কলেজে গিয়ে দেখা গেল ১৫/২০ শিক্ষার্থী ঘুরাঘুরি করছেন। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে একাধিক ছাত্রী বললেন, সরকারি কলেজের মো. রশিদুল ইসলাম স্যার, আমাদেরকে লক্ষীছড়ি সরকারি কলেজের নামে ভর্তি দেখিলে এখানে বড় ভাইদের( স্যার) দিয়ে প্রাইভেটের মতো পড়াচ্ছেন। আমরা ভর্তির আগে এই সম্পর্কে জানতাম না। এখন দেখছি আবার মহিলা কলেজের নামে ব্যানার ঝুলিয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন! এ সময় রা ও উ অর্ধাক্ষরের দুই ছাত্রী বললেন, এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যার সরকারী কলেজে না গিয়ে সারা দিন নিজের একাধিক প্রতিষ্ঠান কলেজ ও বর্ণমালা কিন্ডারগার্টেন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন!

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক ও এইসব অননুমোদিত কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মো. রশিদুল ইসলাম বলেন, আমি অন্য কলেজের নামে এখানে যত্ন ও অধিক গুরুত্ব সহকারে পাঠদান করাচ্ছি। মহিলা কলেজে ভর্তি বেশি হলে আলাদা ক্যাম্পাসে পাঠদান করাবো! এখানে আসলে শিক্ষা নিয়ে কেউ ভাবছেনা বিধায় আমি এগিয়ে এসেছি। এটা নিয়ে না লিখে একটু এড়িয়ে গেলে হয় না!

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী জানান, সরকারি কলেজের এত কাছে পাবলিক কলেজ রয়েছে এটির তথ্য অফিসিয়ালি আমাদের কাছে নেই! নতুন করে মহিলা কলেজ হবে বা হচ্ছে তাও জানা নেই।

উপজেলার অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের সরকারি কলেজ ও বিদ্যালয়সহ উদ্যোক্তা এবং জনপদের প্রথম গ্র্যাজুয়েট তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিউল ইসলাম বলেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার আগে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হয়, স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হয়।। আজকালের ছেলেরা প্রয়োজনীয় জনবল, অবকাঠামো ছাড়া মনগড়াভাবে যত্রতত্র কলেজ খুলে বসে! আবার নাকি একই ভেন্যুতে পাবলিক ও মহিলা কলেজ! শিক্ষা নিয়ে এমন নাটক বা প্রতারণাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, এখানের পাবলিক কলেজ কার্যক্রমও অবৈধ, তারপর আবার মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার খবর পেয়ে আমি প্রতিষ্ঠাতা মো. রশিদুল ইসলামকে ডেকে পাঠিয়ে পাঠদান অনুমোদন ছাড়া এসব বেআইনি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেছি। এর ব্যত্তয় ঘটলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন